অন্যান্য

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দেবে রাশিয়া

কৃষ্ণসাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দেবে রাশিয়া। মস্কো আবার ওই চুক্তিতে ফিরছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। এই চুক্তি পুনর্বহালে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতা করেছে তুরস্ক। খবর- বিবিসি ও আল-জাজিরার।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকারকে ফোন করেছেন। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী এত দিন যে করিডর দিয়ে শস্য রপ্তানি হচ্ছিল, বুধবার থেকে সেভাবে আবার শস্য রপ্তানি করা যাবে।

আরো পড়ুন : বিভিন্ন পরীক্ষাতে এশিয়া মহাদেশ থেকে যত প্রশ্ন এসেছে

এবার শস্য রপ্তানিতে সোমালিয়া, জিবুতি ও সুদানের মতো আফ্রিকার দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে বলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন। রাশিয়ার উদ্বেগের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় শস্য রপ্তানি শুরু হলেও এত দিন তা ধনী ও উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছিল।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শস্য রপ্তানির জন্য তৈরি করিডরকে ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে না—কিয়েভের কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই চুক্তিতে ফিরেছে রাশিয়া।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, কিয়েভের কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি আদায়ে তুরস্ক ও একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সহযোগিতা করেছে। তারা ওই আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম জানায়নি। তবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, রাশিয়াকে শস্য রপ্তানির চুক্তিতে ফেরাতে তুরস্কের পাশাপাশি মধ্যস্থতা করেছে জাতিসংঘ।

আরো পড়ুন : বিশ্বজুড়ে বিচিত্র মন্ত্রণালয়

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার বিশ্বাস, এ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় যেসব নিশ্চয়তা মস্কো পাচ্ছে, তাতে করে চুক্তিতে আবার ফেরা যায়। গত সপ্তাহে সেভাস্তোপল বন্দরে সন্ত্রাসীদের (ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী) হামলার পর রাশিয়া শস্য রপ্তানির চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল।’

২৯ অক্টোবর কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রাশিয়ার নৌবহরে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন বাহিনী। এরপর ওই সাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় মস্কো। তখন ইউক্রেনের সমুদ্রসীমায় শস্য রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে ইউক্রেন থেকে কোনো শস্যবাহী জাহাজ ছেড়ে যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালে দেশটি থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত জুলাইয়ে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ চুক্তি করে দুই দেশ। গত ১ আগস্ট এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশে ৯৩ লাখ টন খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

আরো পড়ুন : সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (CEPA)’র সাতকাহন

রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ দুই গম রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন প্রতি মাসে ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য রপ্তানি করত। সেখানে গত সেপ্টেম্বরে দেশটি ৪০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করে।

কিয়েভে আংশিক ‘ব্ল্যাকআউট’

কিয়েভের বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর একের পর এক হামলায় শহরটির বাসিন্দাদের একটি অংশ এখনো বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত সোমবার কিয়েভসহ ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি পানির সংকটেও পড়েন কিয়েভের বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা সচল হলেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় কিছু কিছু এলাকায় ‘ব্ল্যাকআউট’ চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল মঙ্গলবার কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎশ্চকো বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সংকট মোকাবিলায় নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ক্রিমিয়ায় রুশ নৌঘাঁটিতে হামলার জেরে কিয়েভে এসব হামলা চালায় মস্কো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button