শিক্ষা

উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও প্রতিকার

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। একসময় মনে করা হতো, কেবল বয়স্ক ব্যক্তিরা এতে আক্রান্ত হন। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্র পাল্টেছে। অল্পবয়সীদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে শহরের মানুষ উচ্চ রক্তচাপে বেশি ভোগেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। বরং রোগটি নিয়ে নানা রকম ভুল ধারণা রয়েছে। সচেতনতাও কম।

১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ—এই হচ্ছে একজনের রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা। বয়স কিংবা পরিবেশভেদে একটু এদিক-ওদিক হলেও মোটামুটি এটিই হচ্ছে আদর্শ মান। কিন্তু যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি বেড়ে যায়। সাধারণত টানা দুই দিন যদি কারও রক্তের চাপ ১৪০/৯০-এর বেশি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।

আরো পড়ুন : বাতব্যথা বা আর্থ্রাইটিস রোগী যা খাবেন, যা খাবেন না

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

স্থূলতাকে এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বংশগত কারণেও এটি হয়ে থাকে। যাঁরা কায়িক পরিশ্রমহীন ও অলস জীবন যাপন করেন, তাঁরা এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

  • ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণেও উচ্চ রক্তচাপ হয়।
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ।
  • যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন কিংবা হরমোনজনিত রোগ আছে যাঁদের, তাঁরাও আছেন ঝুঁকিতে।

কীভাবে বুঝবেন

মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা বা বুকের ব্যথাকে আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই। বমিভাব বা বমি হলে গ্যাসের ব্যথা মনে করে গুরুত্ব দিই না। রাতে ঘুম না হলে, অস্থির লাগলে বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেলে মনে করি কাজের চাপে এমনটি হচ্ছে। অথচ এসবই হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ। এ রকম হলে মোটেও হেলাফেলা করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে রক্তের চাপ মেপে দেখুন। সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের কাছে যান।

আরো পড়ুন : হার্ট অ্যাটাক থেকে প্রতিরোধ ও প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপে যেসব জটিলতা হতে পারে

উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। এটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করতে পারে। এটি হৃদ্‌যন্ত্রের পেশিকে দুর্বল করে দেয়। এতে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে গেলে দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হার্ট ফেলিওর বা কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে এ রোগ। শরীরের কোনো অঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এর কারণে চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে যা করবেন

জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। খাবারদাবারে পরিমিত হোন। শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে বেশি করে। পরিহার করুন কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার। অতিরিক্ত বা আলগা লবণ খাবেন না। মদ্যপান, ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকবেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করবেন। আলস্যের অভ্যাস আজই বিদায় করুন। প্রতিদিনই কিছু সময় শারীরিক পরিশ্রম করুন।

ডা. মো. রাসুল আমিন, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button