অন্যান্য

সমন্বিত ব্যাংক নিয়োগ প্রস্তুতি

সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, অফিসার (সাধারণ/ ক্যাশ/টেলার/আরসি) পদে মোট ৩,৪৭২ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যাংক নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মপরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা বিশ্লেষণ করে ক্যারিয়ারবিষয়ক কিছু পরামর্শ নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।

সমন্বিত ব্যাংক

দেশের ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (BSCS)। এসব প্রতিষ্ঠান হলো— সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। চলমান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১৪টি ব্যাংকের সব কয়টি না থাকলেও চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাংক চয়েসের সুবিধার্থে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দের ধরন অনুযায়ী ব্যাংক চয়েস ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

পরিচিতি ও দায়িত্ব

যে ব্যাংকের শাখা সারা দেশে যত বেশি হতে পারে, তার পরিচিতি তত বেশি। পরিচিতি বেশি হওয়ায় দায়িত্ব ও কাজের চাপও অনেক বেশি। যারা ব্যাংকার হওয়াকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান, তাদের উচিত পরিচিতি ও দায়িত্ব বেশি এমন ব্যাংক পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখা। সে ক্ষেত্রে আপনার পছন্দক্রমের প্রথম দিকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক রাখতে পারেন।

পদায়ন

শাখার ওপর নির্ভর করে কিছু ব্যাংকের পদায়ন বিভাগ ও ও বড় শহরে হয়ে থাকে এবং কিছু ব্যাংকের শাখা সকল জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সেখানেও পদায়ন হতে পারে। যারা বিভাগীয় পর্যায়ে বা বড় শহরে থাকতে চান, তাদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন, হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন। যারা নিজ জেলার কাছাকাছি পদায়ন পেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য বেশি শাখা রয়েছে এমন ব্যাংক; যেমন— সোনালী, জনতা, অগ্রণী, কৃষি প্রভৃতি ব্যাংক পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন।

বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ) কৃষি ব্যাংক এবং বাকি দুটি বিভাগে (রাজশাহী ও রংপুর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রয়েছে। তাই নিজের বিভাগে পদায়ন পেতে এ দুটি ব্যাংক থেকে আপনার বিভাগের সঙ্গে সামঞ্জস্যটি পছন্দক্রমের প্রথমে দিয়ে অন্যটি পরের দিকে রাখতে পারেন। সকল ব্যাংকেই শাখা ও শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে নিজ জেলায় পদায়নের সুযোগ রয়েছে।

প্রমোশন

বেসিক ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকে পদসোপান একই রকম। ব্যাংকগুলোতে অফিসার ক্যাশ/অফিসার > সিনিয়র অফিসার > প্রিন্সিপাল অফিসার (PO) > সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (SPO)> অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (AGM) > ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (DGM) > জেনারেল ম্যানেজার (GM) পদগুলোতে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি ব্যাংকে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (DMD) ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর (MD) পদে ব্যাংকার বা অর্থনীতিবিদ থেকে সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকে। GM, DMD ও MD পদগুলোতে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ট্রান্সফারের সুযোগ রয়েছে। একটি ব্যাংকের প্রমোশন সময়ভেদে ধীর বা দ্রুত হতে পারে। প্রমোশন বিবেচনায় বর্তমানে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন, সোনালী ব্যাংক পিএলসি, কৃষি ব্যাংক প্রভৃতি পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন।

লোন সুবিধা ও ইনসেন্টিভস

প্রায় সকল ব্যাংকেই নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য বেসিক হিসেবে বার্ষিক ইনসেন্টিভস / এক্সগ্রেশিয়া (ব্যাংকভেদে সাত-আটটি পর্যন্ত), হাউস লোন (ব্যাংকভেদে এক কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত), এজিএম থেকে কার মেইনটেন্যান্স ও কার লোন (ব্যাংকভেদে ৪০ লাখ পর্যন্ত), মোটরসাইকেল লোন (ব্যাংকভেদে তিন লাখ পর্যন্ত), কম্পিউটার লোন (ব্যাংকভেদে ৮৫,০০০ পর্যন্ত), পারসোনাল লোন – সে সব ব্যাংকে নেই) সুবিধা রয়েছে।

এটি ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের একটি ইতিবাচক দিক এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল জীবনযাপন করার জন্য দারুণ অনুষঙ্গ। ইনসেন্টিভস ও লোন সুবিধার ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন ও সোনালী ব্যাংক পিএলসিকে পছন্দের প্রথম দিকে রাখতে পারেন।

কর্মপরিবেশ ও কাজের চাপ

কর্মপরিবেশ ও কাজের চাপ নির্ভর করে একটি ব্যাংকের শাখার সংখ্যা, কাজের পরিধি, কর্মকর্তার সংখ্যা ও গ্রাহকের সংখ্যার ওপর। শাখায় গ্রাহক বেশি ও কর্মকর্তা কম হলে কাজের চাপ বেশি এবং বিপরীতভাবে উল্টোটা হয়। কর্মপরিবেশ নির্ভর করে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শাখা, শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনার ওপর।

কর্মপরিবেশ ও কাজের চাপ তুলনামূলক কম পেতে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক পিএলসি, বিশেষায়িত ও নতুন ব্যাংক (যেমন— কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ইত্যাদি) পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন।

অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

সকল ব্যাংকের কর্মকর্তারা (বেসিক ব্যাংক ব্যতীত) জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বিশেষ প্রণোদনা ভাতা, সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা ভাতা, উৎসব ভাতা, পেনশন সুবিধাসহ সকল সরকারি সুবিধা পান।

এর বাইরে ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে লাঞ্চ ভাতা, মাঠ পরিদর্শনকালে যাতায়াত ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রভৃতি পেয়ে থাকেন। যোগদানের পর একজন কর্মকর্তাকে ব্যাংকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ৩০ দিন বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়জুড়ে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এছাড়া প্রয়োজনে কর্মজীবনে দেশে বা দেশের বাইরে অন্যান্য প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হয়।

যোগ্যতা

ব্যাংকের অফিসার পদে পরীক্ষা দিতে সাধারণত স্নাতক ডিগ্রিই যথেষ্ট। আবার অনেকেই ভেবে থাকেন, ব্যাংকে চাকরির জন্য ব্যবসা বিভাগ থেকে পড়াশোনা করাটা বাধ্যতামূলক। সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যবসা বিভাগকে কিছুটা প্রাধান্য দেয়। অন্য বিষয়ে পড়েও আপনি ব্যাংকে আবেদন করতে পারবেন। সঙ্গে থাকা চাই কম্পিউটারের দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি, গাণিতিক ও ইংরেজিতে লেখা- বলার দক্ষতা, সময়ানুবর্তিতা ও সততা।

[সংগৃহীত ও পরিমার্জিত]

চাকরির প্রস্তুতি

প্রতিবছরই নতুন জনবলের প্রয়োজন হয় ব্যাংকগুলোর। এজন্য নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয় তিনটি ধাপে। প্রথমত, প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলে লিখিত পরীক্ষা এবং তারপর ভাইভা নেওয়া হয়। প্রশ্ন থাকে বাংলা, গণিত, অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি (কৌশলী চিন্তাভাবনা), ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে। ২২৫ নম্বরের পরীক্ষায় লিখিত ২০০ এবং মৌখিক পরীক্ষা ২৫ নম্বরে হয়ে থাকে। MCQ পরীক্ষার রেজাল্টের পর আপনি প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় নাও পেতে পারেন। সাধারণত রেজাল্ট প্রকাশের ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

গণিত প্রস্তুতি : Geometry | Mensuration | Algebra (Simplification, Equation) | Work & Pipe I Exponent | Average |  Profit-loss Percentage | Interest | Speed & Distance | Partnership I Fraction Trigonometry | Age | Number I Speed.

সাধারণ জ্ঞান : MCQ পরীক্ষার সুবাদে সকলের এই পার্ট কম বেশি পড়া রয়েছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, বঙ্গবন্ধু, দেশের সম্পদ, দর্শনীয় স্থান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, প্রত্নস্থল, গণমাধ্যম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,  খেলাধুলা, অর্থনীতি, বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বিভিন্ন আলোচিত দেশ (প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, রাজধানী, মুদ্রা, সংসদ, নিউজ এজেন্সি ইত্যাদি), যুদ্ধ, প্রণালি, সংগঠন ও জোট (UN, Commonwealth, IMF, World Bank, WTO, WHO, OIC, SAARC, BIMSTEC, ASEAN, OPEC, RCEP, G7, G20, NATO ইত্যাদি), চুক্তি, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, সম্মেলন, পরিবেশ সম্মেলন ও সংগঠন, খেলাধুলা, পুরস্কার, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প, দিবস ও প্রতিপাদ্য, অ্যাব্রিভিয়েশন, ব্যাংকিং সম্পর্কিত বিষয় ইত্যাদি দেখতে পারেন।

পরিশেষে বলা যায়, অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো ব্যাংকে চাকরি করে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতি ও শিল্প খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে, অন্যদিকে আকর্ষণীয় বেতন ও আর্থিক প্রণোদনায় সচ্ছল জীবনযাপন করাও সম্ভব। পাশাপাশি চাকরির নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগতভাবে সেবাগ্রহীতাদের কাছে পরিচিতি পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। তবে আর্থিক দায়িত্ব ও কাজের চাপ, সারা দিন হিসাব-নিকাশের সঙ্গে থাকা, আর্থিক বিষয়াদি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি অনেকের কাছেই জটিল কাজ মনে হতে পারে।

নম্বর বন্টন

প্রিলি.-১০০

  • বাংলা-২৫
  • গণিত-২০
  • ইংরেজি-২৫
  • সাধারণ জ্ঞান-২০
  • বিজ্ঞান ও কম্পিউটার-১০

লিখিত-২০০

  • প্যাসেজ-৩০
  • গণিত-৩০
  • ফোকাস রাইটিং (বাংলায়)-৩৫
  • সাধারণ জ্ঞান-৩০
  • ট্রান্সলেশন-১০
  • ফোকাস রাইটিং (ইংরেজিতে)-৩৫
  • আর্গুমেন্ট রাইটিং (ইরেজিতে)-৩০

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button