পৃথিবীতে মানুষ তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য সম্পদ অর্জন করে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই সম্পদলাভের আকাঙ্ক্ষা সীমা অতিক্রম করে, তখন তা লোভে পরিণত হয়। যাদের অঢেল অর্থ-বিত্ত আছে, তারা আরও বেশি পাওয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে ওঠে। আর সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে তারা অসহায়, গরিব, দুর্বল মানুষদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিতে দ্বিধা করে না। তাই কবি শারীরিকভাবে নয়, নৈতিকভাবে দেউলিয়াদেরই সবচেয়ে ধনী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ধনী ও প্রভাবশালীদের কাছে অর্থ কেবল জীবনযাপনের উপায় নয়, ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার। এই ক্ষমতার মোহে তারা নিজেদের প্রভাব ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে দরিদ্রদের ওপর চালায় নিপীড়ন। তারা নানা রকম কৌশল, প্রতারণা, এমনকি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দরিদ্র মানুষের জমি, ঘর, জীবিকা—সবকিছু কুক্ষিগত করে। কৃষক, শ্রমিক, কুলির রক্ত-ঘামে অর্জিত সম্পদ চলে যায় তাদের ঝাঁ-চকচকে প্রাসাদে। যাদের অনেক কিছু আছে, তারাই সবচেয়ে বেশি চায়; কারণ তাদের চাহিদা লোভে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, গরিব মানুষ সামান্য আহারে দিন কাটিয়েও সুখ খুঁজে পায়। তাদের জীবন কষ্টে গড়া হলেও তাতে থাকে আত্মমর্যাদা, থাকে ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা। তারা অন্যের সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না, প্রতারণার পথ বেছে নেয় না। দুঃখ-দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই তারা নির্মল আনন্দ খুঁজে নেয়, জীবনকে ভালোবাসে। কিন্তু এই শান্তি ধনী শ্রেণীর চোখে সহ্য হয় না। ফলে তারা গরিবের শেষ কুঁড়ে ঘরটিকেও দখল করে নিতে চায়। তাদের লোভের গহ্বর এতটাই গভীর যে, তাতে সমস্ত নৈতিকতা তলিয়ে যায়।
এই অবস্থা চলতে থাকলে সমাজে বৈষম্য এতটাই প্রকট হয়ে উঠবে যে একদিন তা বিস্ফোরণ ঘটাবে। ধনীর লোভ এবং গরিবের বঞ্চনা—এই দুইয়ের সংঘর্ষ সমাজে সৃষ্টি করবে বিশৃঙ্খলা। তাই সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা করার। মানুষের মধ্যকার এই চরম বৈষম্য দূর করতে হবে। ধনীদের উচিত দরিদ্রের কল্যাণে এগিয়ে আসা, সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই প্রকৃত শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, যাদের ভুরি ভুরি আছে তারাই বেশি চায়—এই মানবিক সংকট সমাজের মূলে পচন ধরিয়েছে। আর তাই কবি গলা তুলে বলেছেন, “রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।” এটি কেবল একটি কবিতার চরণ নয়, এটি আমাদের সমাজব্যবস্থার নগ্ন বাস্তবতা, যা বদলানোর সময় এখনই।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে