“কর্তব্যের কাছে ভাই-বন্ধু কেউ নেই”—এই প্রবাদটি আমাদের শেখায় ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার শিক্ষা। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, আত্মীয়তার টান কিংবা বন্ধুত্বের মায়াজাল—সব কিছু ছাপিয়ে কর্তব্যের পথেই চলতে হয় একজন আদর্শ ও বিবেকবান মানুষকে। কারণ, কর্তব্য শুধু ব্যক্তিগত দায় নয়, এটি একাধারে নৈতিক, সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব।
প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু নির্ধারিত কর্তব্য থাকে—পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে বা কর্মক্ষেত্রে। এই কর্তব্য পালনের পথ সব সময় সরল হয় না। প্রলোভন, আত্মীয়তা, আবেগ ও স্বার্থ এসব প্রায়শই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় নিকটজনরা, যেমন ভাই বা বন্ধু, অন্যায়ভাবে কোনো সাহায্য প্রত্যাশা করে। যদি কেউ ন্যায়নিষ্ঠ হয়, তবে তাকে এমন পরিস্থিতিতে আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সত্যিকার কর্তব্যপরায়ণ মানুষ কখনো আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের কারণে সত্যচ্যুত হন না। তারা বিশ্বাস করেন, ন্যায়ের বিচারে আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাই সমান। খলিফা ওমর (রা.)-এর মতো মহান আদর্শ পুরুষরা এই নীতিতেই অনড় ছিলেন। তিনি নিজের সন্তানকেও কঠোর শাস্তি দিতে দ্বিধা করেননি, কারণ তাঁর কাছে পিতৃত্ব নয়, ন্যায়বিচার ও কর্তব্যই ছিল শ্রেষ্ঠ।
এই আদর্শ অনুসরণ করাই একজন প্রকৃত ন্যায়বান মানুষের পরিচায়ক। যে ব্যক্তি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভাই-বন্ধুর আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, সে ব্যক্তি শুধু নিজের কর্তব্যকেই অপমান করে না, সমাজকেও ভুল পথে পরিচালিত করে। পক্ষপাত, দুর্নীতি, অনিয়মের শুরু হয় এখান থেকেই। ফলে সমাজে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা ও অবক্ষয়।
কিন্তু যে ব্যক্তি দৃঢ়চিত্তে কর্তব্যপালনে অটল, সে হয় সমাজের জন্য এক আশীর্বাদ। তার নিরপেক্ষতা, সত্যনিষ্ঠা, এবং ন্যায়পরায়ণতা সকলের কাছে হয় শ্রদ্ধার বিষয়। আবেগ নয়, যুক্তি ও আদর্শই তাকে পরিচালিত করে। সে জানে—‘‘বিশ্ব যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে, একা আমি পড়ে রব কর্তব্য সাধিতে।’’
অতএব, কর্তব্য হচ্ছে নৈতিকতার মূল স্তম্ভ। এটি পালনে আবেগ নয়, প্রয়োজন বিবেকের দৃঢ়তা। তাই একজন সত্যিকারের মানুষ কখনো ন্যায়ের পথে আপস করেন না—even যদি তা ভাই বা বন্ধুর বিরুদ্ধে গিয়ে করতে হয়। এইজন্যই বলা হয়—কর্তব্যের কাছে ভাই-বন্ধু কেউ নেই।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে