মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব তার চরিত্রে নিহিত। মানুষের জ্ঞান, অর্থ, প্রভাব বা প্রতিপত্তির চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ তার নৈতিক চারিত্রিক গুণাবলি। কারণ, চরিত্রই মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। তাই চরিত্রকে বলা হয় জীবনের অলংকার ও অমূল্য সম্পত্তি।
মানুষ যদি হয় অমূল্য রত্ন, তবে তার জ্যোতির মূল উৎস তার চরিত্র। একজন মানুষের চেহারা, পোশাক বা বাহ্যিক অবস্থান যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, যদি তার চরিত্রে সৎকতা না থাকে, তবে সেই মানুষকে সমাজে সম্মান দেওয়া হয় না। বরং চরিত্রবান ব্যক্তি, যিনি সত্যবাদী, সদাচারী, ন্যায়পরায়ণ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত, তিনি সমাজের জন্য হন আদর্শ ও অনুকরণীয়।
চরিত্র গঠিত হয় নৈতিক শিক্ষায়, সৎ চিন্তায় এবং সদ্ব্যবহারে। একজন চরিত্রবান মানুষ শুধু নিজেকে মহান করে তোলেন না, তিনি আশপাশের মানুষকেও অনুপ্রাণিত করেন। তার উপস্থিতিতেই সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় সততা, শৃঙ্খলা ও মানবিকতা। ঠিক যেমন একটি প্রদীপ তার আলোয় চারপাশকে আলোকিত করে, তেমনি একজন চরিত্রবান ব্যক্তি তার নৈতিক শক্তি দিয়ে সমাজকে আলোকিত করেন।
তবে চরিত্রের অভাব হলে মানুষ যত বিদ্বানই হোক না কেন, সে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, জ্ঞান বা প্রতিভা যদি অসৎ চরিত্রের দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে তা সমাজে বিপর্যয় ডেকে আনে। চরিত্রহীন শিক্ষিত মানুষ যেমন সমাজে ভ্রষ্টাচারের জনক, তেমনি চারিত্রিক দৃঢ়তা না থাকলে জাতিও হারায় তার গৌরব। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, চরিত্রবান নেতাই জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারেন।
হযরত মুহাম্মদ (সা.), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহাত্মা গান্ধীর মতো ব্যক্তিত্বরা শুধুমাত্র বুদ্ধিবলে নয়, চরিত্রের বলেই যুগে যুগে মানুষকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁদের জীবনের মূল শক্তি ছিল নৈতিকতা, মানবতা ও আত্মত্যাগ।
অতএব, চরিত্র শুধু ব্যক্তিজীবনে নয়, সামাজিক ও জাতীয় জীবনেও মহৎ প্রভাব রাখে। এটি মানুষকে মহিমান্বিত করে, দেয় স্থায়ী মর্যাদা ও গৌরব। তাই চরিত্রকে যথার্থ অর্থেই বলা হয় জীবনের অলংকার ও অমূল্য সম্পত্তি—যা না থাকলে জীবনের সব অর্জনই নিস্ফল।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে