এই প্রবাদবাক্যে নিহিত আছে মানবজীবনের আসল সত্য। মানুষের জন্ম সে নিজে নির্ধারণ করতে পারে না। কে কোন পরিবারে, কোন জাতি বা ধর্মে, ধনী না গরিব ঘরে জন্মাবে—এসবই ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সে কী কাজ করবে, কেমন জীবন গড়বে, তা সম্পূর্ণ তার নিজের হাতে। জন্ম যদি নিয়তির অনিবার্যতা হয়, তবে কর্মই মানুষের স্বকীয়তা ও সম্মানের ভিত্তি।
সমাজে অনেকেই বংশমর্যাদা, জাতপাত কিংবা অর্থবিত্তের কারণে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করেন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নের মাপকাঠি কখনোই জন্মসূত্রে পাওয়া পরিচয় নয়, বরং তা নির্ধারিত হয় তার সততা, নিষ্ঠা ও মানবিক অবদানের মাধ্যমে। যেমন—একজন রাজমিস্ত্রী বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী যদি তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে, সমাজ তাকে সম্মানের চোখেই দেখে। অন্যদিকে, উঁচু বংশে জন্মেও কেউ যদি অসৎ, স্বার্থপর ও অবিবেচক হয়, তবে সে মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়।
পদ্মফুল যেমন কাদামাটিতে জন্মেও সৌন্দর্য ও সুগন্ধে মহিমান্বিত, তেমনই কোনো সাধারণ পরিবারে জন্মেও কেউ কেউ তাঁর কর্মগুণে হয়ে ওঠেন অসাধারণ। ইতিহাসে নজরুল, বিদ্যাসাগর, ডঃ এপিজে আবদুল কালামের মতো মহাপুরুষেরা সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়েও কর্মে হয়েছেন মহৎ ও স্মরণীয়। তাঁদের জন্ম নয়, তাঁদের কর্মকেই মানুষ শ্রদ্ধা জানায়।
বস্তুত, কর্মই মানুষের আসল পরিচয়। একটি সমাজ তখনই সুস্থ ও সমৃদ্ধ হয়, যখন সকল কাজকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং কর্মের ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। যে সমাজে জন্মের চেয়ে কর্ম বেশি গুরুত্ব পায়, সে সমাজ হয় প্রকৃত অর্থে মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক।
সুতরাং, জন্ম যেমনই হোক না কেন, কর্ম যেন হয় নিষ্ঠাবান, মানবিক ও কল্যাণমুখী। তাহলেই ব্যক্তি নিজেও গৌরব অর্জন করতে পারবে এবং সমাজেও প্রতিষ্ঠিত হবে কর্মের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা। এই শিক্ষাই এই প্রবাদবাক্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য— “জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল।”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে