ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

মানুষের জীবনে ঈশ্বরের আরাধনা এক মহৎ সাধনা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায় না মন্দির-মসজিদ বা গীর্জার ভেতরে বন্দি হয়ে। ঈশ্বরের প্রকৃত সান্নিধ্য লাভ করতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, জীবজগৎকে ভালোবাসতে হয়। কারণ প্রতিটি জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিরাজ করে। সেইজন্যেই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

প্রত্যেক মানুষ যদি অন্য মানুষকে আপন ভেবে ভালবাসে, সহানুভূতিশীল হয়, সাহায্য করে, তাহলে সে ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। আর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাই হলো স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধার প্রকৃত রূপ। কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকলে তাকে খাবার দেওয়া, অসুস্থ হলে তার সেবা করা, বিপদে পড়লে সাহায্য করা—এসব কাজই প্রকৃত ঈশ্বরসেবার সামিল। ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ হলো মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে অনুভব করা।

আজকের পৃথিবীতে এই মানবতাবোধ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ অর্থ, ক্ষমতা আর স্বার্থের পিছনে ছুটে গিয়ে ভুলে যাচ্ছে মানবপ্রেমের মূল্য। যুদ্ধ, হিংসা, হানাহানি, জাতপাতের বিভাজন—সবই মানুষের তৈরি। অথচ ঈশ্বর চেয়েছেন মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা আর সহানুভূতির সম্পর্ক গড়ে উঠুক। সেই চাওয়ার প্রতিফলন ঘটে তখনই, যখন আমরা অসহায়কে সাহায্য করি, পশু-পাখির প্রতি মমতা দেখাই, পরিবেশকে রক্ষা করি। প্রকৃতপক্ষে, জীবে প্রেমের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকৃত সেবা নিহিত।

এখানে “জীব” শব্দটির অন্তর্নিহিত অর্থ শুধু মানুষ নয়—সকল জীবিত প্রাণ, সকল সত্তা। তাই জীবসেবা বলতে বোঝায় গাছ, পশু-পাখি, পরিবেশ এমনকি সমস্ত সৃষ্টিকে সম্মান ও স্নেহ করা। এতে মানুষ নিজের মধ্যেই ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে শেখে। এই উপলব্ধি তার জীবনকে করে তোলে শান্তিময়, মহৎ ও অর্থবহ।

স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতেই হবে। প্রতিটি জীবের প্রতি সহানুভূতি, মমতা ও প্রেম—এই মানবিক গুণাবলিই আমাদের ঈশ্বরের আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়। তাই শুধুমাত্র নির্জন ধ্যান নয়, মানবতার সেবাই হওয়া উচিত আমাদের শ্রেষ্ঠ উপাসনা।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে