এই প্রশ্নে নিহিত আছে মানবতাবোধ, সহিষ্ণুতা ও নৈতিক চেতনার গভীরতম বার্তা। সমাজে যেমন ভালো মানুষ আছে, তেমনি আছে মন্দ লোকও। কিন্তু কারও অসৎ আচরণ কিংবা অন্যায় কর্মকাণ্ড দেখে যদি আমরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠি, অথবা আমরাও সেই পথ অবলম্বন করি, তাহলে আমাদের আর সেই অধমদের সঙ্গে পার্থক্যই বা কোথায় থাকে?
মানুষের আসল পরিচয় তার আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায়। একজন উত্তম মানুষ কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজ ও জাতির জন্যও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, কিন্তু নিজে কখনও অন্যায়ের পথে পা বাড়ান না। একজন উত্তম ব্যক্তি জানেন, অন্যের দোষে উত্তেজিত হয়ে নিজেকে কলুষিত করা মানে নিজের মানবতাকে ছোট করা। এই কারণে কবি বলেছেন, “তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?”—কারণ প্রকৃত মনুষ্যত্ব মানেই হলো উত্তম পথের অনুসরণ।
এমনও দেখা যায়, সমাজে অধম চরিত্রের লোকেরা নানা ছলচাতুরী, দুর্নীতি বা প্রতারণার মাধ্যমে সাময়িক সাফল্য অর্জন করে। তারা বিত্ত-বৈভবে ভরপুর হয়, ক্ষমতার দম্ভে সমাজে ভয় জাগায়। কিন্তু এই সাফল্য ক্ষণস্থায়ী এবং এর ফলাফল শেষমেশ ভয়াবহ। কারণ মন্দ পথে অর্জিত কিছুই চিরস্থায়ী হয় না। অন্যদিকে, যিনি সততার সঙ্গে, নৈতিকতার সঙ্গে জীবনযাপন করেন, তিনি হয়তো বাহ্যিকভাবে ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ নাও হতে পারেন, কিন্তু তাঁর আত্মা থাকে নির্মল, চরিত্র থাকে দৃঢ়, এবং সমাজে তিনি সম্মানের পাত্র হন।
এজন্যই প্রকৃত মানুষ কখনও অধমের পথে পা বাড়ায় না। অন্যায়ের প্রতিক্রিয়ায় অন্যায় নয়, বরং ন্যায়ের আলোয় জবাব দেওয়াই মানবধর্ম। উত্তম হওয়া মানে দুর্বলতা নয়, বরং তা হল সহিষ্ণুতা, আত্মসংযম ও নৈতিক বলের প্রকাশ। এভাবেই উত্তম মানুষেরা অধমদের কলুষতা উপেক্ষা করে সমাজে নৈতিকতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
সুতরাং, আমাদের পথ হওয়া উচিত সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার। অধমের দৃষ্টান্ত দেখে হতাশ না হয়ে নিজেকে উত্তম করে গড়ে তোলাই প্রকৃত জয়ের পথ। সেই কারণেই বলা হয়, “তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” — এই একবাক্যেই লুকিয়ে আছে মনুষ্যত্বের প্রকৃত দর্শন।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে