ভাবসম্প্রসারণ: “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” / “যেমন কর্ম তেমন ফল”

জীবনে সাফল্য, সম্মান ও সৌভাগ্য কারো হাতে হঠাৎ করে এসে পড়ে না। এর পেছনে থাকে অবিরাম শ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায়ের দীর্ঘ অধ্যায়। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ তার জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। ঠিক যেমন একটি বীজকে নিয়মিত যত্ন করে পরিচর্যা করলে তবেই তা একদিন মহীরুহে পরিণত হয়, তেমনি মানুষকেও নিজের ভাগ্য গঠনের জন্যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি না রেখে এগিয়ে যেতে হয়।

মানুষের কর্মফল নির্ভর করে তার নিজের ওপর। যে যেমন পরিশ্রম করে, সে তেমন ফল পায়—এটাই প্রকৃতির চিরন্তন নিয়ম। কেউ যদি অলসতায় ভোগে ও নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে চলে, তাহলে সে জীবনে অগ্রসর হতে পারবে না। আবার কেউ যদি ধৈর্য, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করে, তবে তার সাফল্য একদিন নিশ্চিতভাবেই ধরা দেবে। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই—বিপুল শ্রমের বিনিময়ে সফলতা লাভ করেছেন মহৎ মানুষরা। আলবার্ট আইনস্টাইন, আব্রাহাম লিঙ্কন কিংবা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম—তাঁদের জীবনের পেছনেও ছিল না রাজকীয় আরাম-আয়েশ, ছিল কেবল সংগ্রাম আর সাধনার ইতিহাস।

অনেকে বলে থাকেন, “ভাগ্যে যা আছে, তাই হবে।” কিন্তু এই বিশ্বাস মানুষকে কর্মবিমুখ ও আত্মতুষ্ট করে তোলে। বাস্তবে, ভাগ্যও তার পক্ষেই সদয় হয়, যে ব্যক্তি নিজের সাধনায় কোনো খামতি রাখে না। ভাগ্য এমন এক নদী, যার উৎস তৈরি হয় মানুষের পরিশ্রমেই। তাই কেবল ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে চলবে না; প্রয়োজন নিরন্তর চেষ্টা ও অধ্যবসায়।

জাতীয় পর্যায়েও এই নীতি প্রযোজ্য। যে জাতি পরিশ্রমকে জীবনের ব্রত করে নেয়, সে-ই হয় উন্নত ও সমৃদ্ধ। আর যে জাতি অলসতা, দুর্নীতি ও স্বার্থপরতায় নিমজ্জিত, সে পিছিয়ে পড়ে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

সুতরাং, সৌভাগ্য বা সাফল্য কারো ‘জন্মগত অধিকার’ নয়; এটি অর্জন করতে হয় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে প্রকৃত উন্নয়ন, শান্তি ও সম্মান অসম্ভব। তাই বলা হয়—

“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”।
এবং,
“যেমন কর্ম তেমন ফল”।

এই উক্তিগুলির তাৎপর্যই হলো—মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় তার নিজের কর্ম ও সাধনার ওপর।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে