এই উক্তির গভীর বার্তা হলো নিঃস্বার্থতা, আত্মনিবেদন ও পরার্থপরতার আদর্শ। প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই মহৎ হয়ে ওঠে, যখন তা কেবল নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য উৎসর্গিত হয়। যেমন পুষ্প—যার রূপ ও গন্ধ সে নিজের জন্য ধরে রাখে না, বরং বিলিয়ে দেয় সমাজ, পরিবেশ, দেবতা কিংবা ভালোবাসার মানুষের জন্য। তেমনি মানুষের হৃদয়ও যদি পরের কল্যাণে প্রস্ফুটিত হয়, তাহলেই তার মানবজীবন সার্থক হয়।
একটি ফুলের জীবন ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু সেই অল্প সময়েই সে হয়ে ওঠে শুভ্রতার, সৌন্দর্যের ও স্নেহের প্রতীক। সে কারো অলঙ্কার হয়, কারো পূজার সামগ্রী হয়, আবার কারো দুঃখ মোচনের মৃদু সমবেদনা হয়ে ওঠে। অথচ সে নিজের জন্য কিছুই রাখে না। নিজের সার্থকতা খুঁজে নেয় অন্যের সেবায়, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর আনন্দে। মানুষকেও যদি এমন হয়—যে হৃদয় কেবল নিজের সুখ, স্বার্থ আর চাহিদা নয়, বরং অন্যের দুঃখ লাঘব, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে উৎসর্গিত, তাহলে সমাজ হয়ে উঠবে অনেক বেশি সুন্দর, শান্তিময় ও মানবিক।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সে একা জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না। তাই সমাজের প্রতি তার রয়েছে কিছু কর্তব্য—সহানুভূতি, সহমর্মিতা, দায়িত্ব ও সেবা। কেবল নিজের জন্য বেঁচে থাকা নয়, অপরের জন্য বাঁচার মধ্যেই নিহিত থাকে পরিপূর্ণতা। একজন মানুষ যখন নিঃস্বার্থভাবে সমাজের উপকারে আত্মনিয়োগ করে, তখনই সে প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়।
এই ভাবনাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের সেই অমর পংক্তি:
“সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”
মানবসভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসে যে সকল মানুষ সত্যিকারের সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছেন, তাঁরা সবাই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন অন্যের কল্যাণে। মাদার তেরেসা, স্বামী বিবেকানন্দ, হেলেন কেলার, কিংবা বাংলাদেশের ফজিলাতুন্নেসা বা আকিজউদ্দিনদের মতো মানুষ সেই নিঃস্বার্থ কর্মের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
সুতরাং, আমাদের হৃদয় যেন ফুলের মতোই প্রস্ফুটিত হয়—ভালোবাসায়, সহানুভূতিতে, সেবায়। নিজের সুখ নয়, অন্যের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারার আনন্দেই হোক আমাদের জীবনের প্রকৃত পরিতৃপ্তি। কারণ পুষ্প যেমন ফোটে পরের জন্য, মানুষের হৃদয়ও তেমনি প্রস্ফুটিত হোক বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে