প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণী ও উপাদান তখনই তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও স্বাতন্ত্র্য লাভ করে, যখন তা তার নিজস্ব পরিবেশে অবস্থান করে। প্রকৃতি এক বিস্ময়কর শৃঙ্খলার নাম, যেখানে প্রতিটি সত্তা তার স্বাভাবিক পরিসরে, নিজস্ব স্বত্বায় পূর্ণতা পায়। এই কারণেই বলা হয়, “বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।”
বনের হরিণ, সিংহ, বাঘ, ময়ূর — এরা সবাই তাদের নিজস্ব পরিবেশে সৌন্দর্য ও শক্তিময় হয়ে ওঠে। খাঁচায় বন্দি পশুর সেই প্রাণচঞ্চলতা বা ঐশ্বর্য থাকে না। যেমন, বনের বাঘ বনেই রাজত্ব করে, শহরের চিড়িয়াখানায় সে হয়ে পড়ে অসহায় ও নিস্তেজ। অনুরূপভাবে, একটি শিশু তখনই সবচেয়ে সুন্দর, নিরাপদ ও স্বাভাবিক থাকে যখন সে মায়ের কোলের উষ্ণতা ও স্নেহের ছায়ায় আশ্রয় পায়। মায়ের কোলে তার মুখে যে হাসি ফুটে ওঠে, তা কোনো রাজপ্রাসাদের ভোগবিলাসেও সম্ভব নয়।
শিশু যেমন মাতৃক্রোড়ে স্নেহ, ভালোবাসা ও নিরাপত্তা পায়, তেমনি প্রতিটি প্রাণী তার নিজস্ব পরিসরে ও পরিবেশে পায় স্বাচ্ছন্দ্য ও পূর্ণতা। পরিবেশ থেকে বিচ্যুত হলে প্রাণী যেমন কষ্ট পায়, তেমনি হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য ও আচরণ। শিশুকে যেমন জোর করে মায়ের কোল থেকে আলাদা করলে কান্না শুরু হয়, তেমনি প্রকৃতির প্রাণীকেও তার পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিলে শুরু হয় অশান্তি।
এই প্রবাদটি শুধু প্রকৃতিগত সত্য নয়, মানবজীবনের নীতিগত শিক্ষাও দেয়। যেমন আমরা যদি কাউকে তার স্বাভাবিক পরিবেশ বা অবস্থান থেকে জোর করে সরিয়ে দিই, তবে তার বিকাশ ব্যাহত হয়। সমাজেও এই কথা সত্য — প্রত্যেক মানুষ, শিশু, শ্রমিক, কৃষক, শিল্পী— যার যার নিজস্ব স্থানেই সবচেয়ে বেশি স্বাভাবিক ও কার্যকর।
প্রকৃতি ও জীবনের সৌন্দর্য তার স্বাভাবিকতা ও সামঞ্জস্যে। যে যেমন পরিবেশে বেড়ে ওঠে, সে তেমন পরিবেশেই সুখী ও সুন্দরভাবে বিকশিত হয়। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি জীবসত্তাকে তার স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে — এই চিরন্তন সত্যই আমাদের শেখায় প্রকৃত স্বাভাবিকতার মূল্য।