ভাবসম্প্রসারণ : বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু

জীবন ও বিদ্যা—এই দুটি শব্দ যেন পরস্পরের পরিপূরক। একটি যেমন মানবজীবনের গঠনের উপকরণ, অপরটি সেই জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। বিদ্যার আলো ছাড়া যেমন জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে, তেমনি সেই বিদ্যা যদি জীবনের প্রয়োজনে কাজে না আসে, তবে তা থাকে নিস্তেজ, পঙ্গু ও অকেজো। অর্থাৎ, বিদ্যা ও জীবনের সম্পর্ক না থাকলে দুটি-ই উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।

একজন শিক্ষিত মানুষ যদি তার জ্ঞানকে ব্যক্তিগত বা সামাজিক কল্যাণে ব্যবহার করতে না পারে, তবে সেই শিক্ষার কোনো বাস্তব মূল্য নেই। শুধুমাত্র সনদ অর্জনের জন্য বইয়ের পৃষ্ঠা মুখস্থ করে যে বিদ্যা অর্জিত হয়, তা জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এ ধরনের বিদ্যা সমাজ গঠনের কাজে লাগে না, মানুষের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে না। এ যেন অচল মুদ্রার মতো, যার কোনো লেনদেন চলে না।

আবার, বিদ্যার আলোহীন জীবনও গন্তব্যহীন। যেমন অন্ধ ব্যক্তি চোখে দেখে না, তেমনি অশিক্ষিত ব্যক্তি জীবনপথে প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা ও বিপদের মুখোমুখি হয়। শিক্ষা মানুষকে মানবিক গুণে গুণান্বিত করে, চিন্তাশক্তি দেয়, বিচারবোধ জাগায়। শিক্ষা না থাকলে মানুষ নিজের অধিকার বুঝতে পারে না, সমাজের অগ্রগতিতেও অংশ নিতে পারে না। তাই বিদ্যার আলো ছাড়া জীবন অন্ধকারময়।

যথার্থ শিক্ষা হলো সেই বিদ্যা, যা জীবনকে গঠন করে, মানুষকে নৈতিকতায় বলীয়ান করে তোলে। একজন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ কেবল নিজের উন্নতিই নয়, সমাজ ও জাতির উন্নয়নেও আত্মনিয়োগ করেন। জীবন ও বিদ্যার এই সম্মিলনেই সৃষ্টি হয় আলোকিত মানুষ, যারা নিজের জীবনকে করে অর্থবহ, অপরের জীবনে আনেন আশার আলো।

শিক্ষার সার্থকতা তখনই, যখন তা জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়। একটি সমাজ তখনই উন্নত হয়, যখন শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাঁদের বিদ্যা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন। তাই বিদ্যাকে চাই জীবনমুখী করা, এবং জীবনকে গড়তে চাই প্রকৃত শিক্ষা। কেননা, “বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন যেমন অন্ধ, তেমনি জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু।”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে