মানুষ চিরকাল সুখের সন্ধান করে এসেছে। কেউ ভেবেছে ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস—এই সবের মধ্যেই সুখ নিহিত। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, এইসব বাহ্যিক উপকরণ শুধু সাময়িক আরাম দিতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী প্রশান্তি ও পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে না। সুখ প্রকৃতপক্ষে এক অভ্যন্তরীণ অনুভূতি—যা আসে আত্মতৃপ্তি, কর্তব্যপরায়ণতা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মের মাধ্যমে।
যে মানুষ শুধু ভোগের পেছনে ছুটে চলে, তার চাহিদা কখনো শেষ হয় না। একটি ইচ্ছা পূর্ণ হলে আরেকটি জন্ম নেয়। এভাবে তার চাহিদার খাতা দীর্ঘ হতে থাকে, কিন্তু হৃদয়ের অভ্যন্তরে শূন্যতা থেকেই যায়। ভোগ মানুষকে আরামপ্রিয় করে তোলে, ফলে সে ধীরে ধীরে কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। কর্ম না করলে আত্মিক বিকাশ ঘটে না, আর আত্মিক বিকাশ ব্যতিরেকে প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব নয়। সেইজন্যই বলা হয়, “ভোগে সুখ নাই”।
অপরপক্ষে, যে মানুষ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে, নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সমাজের জন্য কিছু করে, সে অন্তরে এক পরম শান্তি অনুভব করে। গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দুর্দশাগ্রস্তদের মুখে হাসি ফোটানো, অন্যের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা—এইসব কর্ম মানুষের অন্তরকে পূর্ণ করে দেয়। কর্মফল নয়, কর্মই তখন হয়ে ওঠে তার আনন্দের উৎস। এই আনন্দই প্রকৃত সুখ।
উদাহরণস্বরূপ, সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের সেবায়—যেমন মহাত্মা গান্ধী, বিবেকানন্দ, মাদার তেরেসা প্রমুখ। তাঁরা কখনো ভোগের পেছনে ছোটেননি, বরং আত্মত্যাগের মধ্যেই সুখ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, সেবা ও কর্মই পারে মানুষকে প্রকৃত তৃপ্তি দিতে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, সুখ কোনো বস্তু নয় যা বাইরে থেকে অর্জন করতে হয়; বরং এটি একটি মানসিক অবস্থা, যা জন্ম নেয় সৎ কর্মের মাধ্যমে। নিরন্তর কর্মেই জীবনের গতি, উদ্দীপনা ও সৌন্দর্য নিহিত। কর্মহীন জীবন অর্থহীন, আর অর্থহীন জীবন কখনোই সুখের হতে পারে না।
জীবনে সুখ চাইলে ভোগ নয়, চাই কর্ম। যে কর্মে আত্মা সন্তুষ্ট, যে কর্মে অন্যের মুখে হাসি ফোটে, সেই কর্মই সত্যিকারের সুখের বাহক। ভোগ ক্ষণিকের, কিন্তু কর্ম চিরন্তনের পথে চালিত করে। তাই আসুন, আমরা সকলে ভোগের মোহ ত্যাগ করে আত্মনিবেদিত কর্মের মধ্য দিয়ে প্রকৃত সুখের সন্ধান করি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে