ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে

মানুষের চরিত্র গঠনে শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সেই শাসন যদি হয় নির্দয়, হৃদয়হীন, আর প্রতিহিংসায় পূর্ণ, তবে তা ব্যক্তির সংশোধনের পরিবর্তে তাকে আরও বিদ্রোহী করে তোলে। তাই প্রকৃত শাসক বা বিচারক সে-ই, যার শাসনের মূল ভিত্তি স্নেহ, মমতা এবং সংশোধনের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা। শাসনের মধ্যে যদি সোহাগের পরশ না থাকে, তবে তা হয়ে ওঠে নিছক শাস্তি—যা আত্মা দহন করে, কিন্তু চরিত্র গঠন করে না।

সন্তানকে শাসন করেন পিতা-মাতা, শিক্ষক শাসন করেন ছাত্রকে—কিন্তু এই শাসন কখনই ঘৃণা কিংবা প্রতিহিংসা থেকে আসে না। আসে ভালবাসা, দায়িত্ববোধ ও কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে। এজন্যই বলা হয়, “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।” সোহাগবিহীন শাসন শুধু ভয় তৈরি করে, কিন্তু বিবেক জাগ্রত করতে পারে না। কিন্তু যেখানে স্নেহ থাকে, সেখানে শাসনও হয় আশীর্বাদস্বরূপ। মানুষের ভেতরের সুপ্ত শুভবোধকে জাগিয়ে তোলে।

বিচারকের আসনে বসে যদি কেউ শাস্তি দেয় কেবল অপমান বা দুঃখ দেওয়ার জন্য, তবে তা অত্যাচার ছাড়া কিছু নয়। পক্ষান্তরে, যে শাসক অপরাধীর কল্যাণ কামনায় তাকে সংশোধনের পথ দেখায়, সেই প্রকৃত অর্থে সমাজকে সুস্থ ও সুন্দর করে তোলেন। অপরাধ ঘৃণিত, কিন্তু অপরাধী নয়—এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে যিনি বিচার করেন, তিনিই মানবিক সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারেন।

একজন প্রকৃত নেতা, শিক্ষক বা অভিভাবক কখনও কঠোরতা দিয়ে নয়, বরং ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে শাসন করেন। শাসনের এই মানবিক রূপই মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলে, অনুশোচনার জন্ম দেয়, এবং তাকে সত্য, ন্যায় ও আদর্শের পথে ফেরায়।

সারাংশে বলা যায়, শাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশোধন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে উৎসারিত স্নেহশীল প্রয়াস। যে শাসনে সোহাগ নেই, তা মানুষের আত্মিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তাই একজন প্রকৃত শাসক বা বিচারক কখনই মানুষকে দমন করতে চান না, বরং তাকে তার প্রকৃত সত্তায় ফিরিয়ে আনতে চান। সেইজন্যই বলা হয়—“শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে”।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে