শিক্ষা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের জন্য এক অনন্য শক্তি। এটি কেবলমাত্র কিছু তথ্য মুখস্থ করার মাধ্যম নয়, বরং মানুষের চিন্তা-চেতনা, মানবিকতা, বিবেক ও মূল্যবোধকে গঠনের প্রধান পথ। ঠিক যেমন করে মানবদেহে মেরুদণ্ড ছাড়া চলাফেরা অসম্ভব, তেমনি একটি জাতির সুসংগঠিত, স্বনির্ভর ও সম্মানজনক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। তাই একে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড।
একটি জাতির চিন্তাধারা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে তার শিক্ষায়। শিক্ষিত জাতি কখনোই পরনির্ভরশীল হয় না। তারা নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে তোলে। শিক্ষা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে, দায়িত্ববোধ জাগায় এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে, অশিক্ষা জাতিকে পরাধীনতা ও দুর্দশার অতল গহ্বরে ঠেলে দেয়। তাই কবি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, “বিদ্যাহীন মানুষ পশুর সমান”।
ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি শিক্ষায় অগ্রসর, সেই জাতিই সভ্যতার শীর্ষে উঠে এসেছে। জাপান তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েও তারা শিক্ষার আলোয় দেশকে গড়ে তুলেছে। আজ তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি বড় শক্তি। অন্যদিকে, আমাদের মতো অনেক দেশের হাজারো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অশিক্ষার অভিশাপে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা দূর হচ্ছে না।
শিক্ষা শুধু চাকরির উপায় নয়, এটি মানুষের মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতা গড়ার মূল ভিত। মহানবী (স) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করো, তা হোক দূর চীন দেশে গিয়েও।” ইসলাম থেকে শুরু করে বিশ্বের সব বড় ধর্ম ও দার্শনিক দর্শন শিক্ষা ও জ্ঞানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কারণ শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে, পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণ ঘটায়।
আজকের এই বিশ্ব প্রতিযোগিতার যুগে যে জাতি শিক্ষায় যত এগিয়ে, তারাই আধিপত্য বিস্তার করছে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, শিল্পে, সংস্কৃতিতে ও নেতৃত্বে। আমরা যদি আমাদের দেশকে সত্যিকার অর্থে উন্নতির চূড়ায় দেখতে চাই, তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সর্বজনীন প্রসার। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের প্রান্তিক জনগণ—সবার দ্বারে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে।
একটি জাতি তখনই মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াতে পারে, যখন তার নাগরিকরা শিক্ষিত ও সচেতন হয়। শিক্ষাহীনতা শুধু ব্যক্তিগত দুর্দশা নয়, জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তাই আমাদের প্রত্যেককে শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে শিক্ষিত করতে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড”—এই সত্য উপলব্ধি করে তবেই গড়ে উঠবে একটি শক্তিশালী, উন্নত ও আত্মনির্ভর জাতি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে