মানুষ যে শ্রেষ্ঠ জীব, তা শুধু তার শারীরিক গঠন বা বুদ্ধিবৃত্তির জন্যে নয়—তার অন্তরের যে অনুভূতি, তার হৃদয়ে যে ভালোবাসা, তার কর্মে যে আত্মত্যাগের ঔজ্জ্বল্য—সেই জন্যেই। আর এই আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ ঘটে যখন মানুষ তার জন্মভূমির জন্যে নিবেদিত হয়। যে ব্যক্তি জন্মভূমির প্রতি কর্তব্য ভুলে গিয়ে কেবল নিজের স্বার্থে বাঁচে, সে মানুষ নামে পরিচিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে সে মানবতার মর্যাদা ধারণ করে না।
জন্মভূমি কেবল একটি ভৌগোলিক সীমারেখা নয়—এ এক আত্মিক বন্ধন, এক অনুভবের ক্ষেত্র। মায়ের কোল যেমন শিশুর প্রথম আশ্রয়, তেমনই স্বদেশ ভূমি মানুষের অস্তিত্বের প্রথম পাথেয়। মাটির ঘ্রাণ, মাঠের হাওয়া, নদীর কলতান, মানুষের মুখের ভাষা—এইসব মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক অদৃশ্য সম্পর্ক, যা প্রাণ দিয়ে রক্ষা করার মতো পবিত্র। সেই সম্পর্কের প্রতি অবহেলা করা মানে নিজের শেকড় ছিন্ন করা, নিজের আত্মাকে অস্বীকার করা।
যে ব্যক্তি স্বদেশের উপকারে নয়, কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধিতেই মগ্ন, সে সমাজে এক বোঝা মাত্র। সে যে বাঁচে, তা নিজের মতো; তার বেঁচে থাকায় দেশের কোনো উপকার নেই, জাতির কোনো গৌরব নেই। সে যেন এক বিবেকহীন প্রাণী, যার জীবন স্বার্থপরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। পক্ষান্তরে যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা কেবল নিজের জন্যে নয়, সবার জন্যে বাঁচে। তারা জানে, “স্বদেশের মাটি, আমার প্রাণের স্নেহভূমি।” সেই ভালোবাসায় তারা আগুনে পোড়ে, তবুও ধ্বংস হয় না; বরং তারাই ইতিহাসে অমর হয়ে ওঠে।
একটি বৃক্ষ যেমন নিজের ছায়া ও ফল দিয়ে অন্যের কল্যাণ করে, একজন প্রকৃত মানুষ তেমনি নিজের শ্রম, মেধা, ও ভালোবাসা দিয়ে স্বদেশকে সমৃদ্ধ করে। দেশের উপকারে যারা জীবনকে উৎসর্গ করেন, তারাই প্রকৃত অর্থে মানুষ। আর যারা কেবল নিজের স্বার্থে, স্বজাতিকে ভুলে কেবল ভোগে মেতে থাকে—তাদের চেয়ে পশুও শ্রেয়, কারণ পশু অন্তত নিজের স্বভাবেই বাঁচে; মানুষ হয়েও যারা স্বার্থপর, তারা স্বজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতক।
তাই বলা হয়, যার অন্তরে নেই স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, যার কর্মে নেই দেশের উপকার, তাকে মানুষ বলা যায় না। সে সভ্য সমাজে থেকেও এক বুনো অরণ্যের পশুর মতো, যে কেবল নিজের প্রয়োজনেই বাঁচে। মানবজীবনের প্রকৃত মহিমা স্বদেশপ্রেমে; আর স্বদেশের কল্যাণেই মানবতার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে