সকল প্রশ্নইসলাম/হিন্দু/খ্রিস্টান ধর্মে সহবাস নিয়ে কী বিধান আছে?
Preparation Staff asked 1 month ago
মানবজীবনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলো দাম্পত্য সম্পর্ক এবং শারীরিক মিলন। প্রতিটি ধর্মই এই বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা ও বিধান প্রদান করেছে। এখানে ইসলাম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের আলোকে সহবাস সংক্রান্ত বিধান বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।

ইসলামে সহবাসের বিধান

ইসলামে দাম্পত্য সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং সহবাসকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রকৃতিগত ও বৈধ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে বিবাহের মাধ্যমে সহবাসকে বৈধ করা হয়েছে এবং এর কিছু নিয়ম ও শিষ্টাচারও নির্ধারণ করা হয়েছে।
  1. বৈধতা: কেবল বৈধ বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহবাস বৈধ। অবৈধ সম্পর্ক বা ব্যভিচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
  2. শুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতা: সহবাসের পর গোসল (গোসল-ই জানাবাত) ফরজ করা হয়েছে।
  3. সম্মতি ও ন্যায়বিচার: স্বামী-স্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে সহবাস করা উচিত, যাতে কোনো পক্ষের উপর জোরপূর্বক কিছু চাপিয়ে দেওয়া না হয়।
  4. নিষিদ্ধ সময়: রমজান মাসে দিনের বেলায়, হজ পালনকালে এবং মহিলাদের মাসিক ও প্রসবকালীন সময় সহবাস নিষিদ্ধ।
  5. সহবাসের দোয়া: সহবাসের আগে ও পরে নির্দিষ্ট দোয়া পড়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সন্তান শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পায়।

হিন্দু ধর্মে সহবাসের বিধান

হিন্দু ধর্মেও সহবাসকে পবিত্র বিবেচনা করা হয় এবং এটি কেবল বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যেই বৈধ। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে দাম্পত্য সম্পর্ক ও সহবাস নিয়ে বিভিন্ন বিধান রয়েছে।
  1. বিবাহ ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা: হিন্দু ধর্মে বিবাহিত জীবনকেই সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত সহবাসের একমাত্র পথ হিসেবে গণ্য করা হয়।
  2. সংসার ধর্ম: গৃহস্থ আশ্রমের অংশ হিসেবে সহবাসকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও পারস্পরিক বন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়।
  3. পবিত্রতা ও স্নান: সহবাসের পর শারীরিক পবিত্রতার জন্য স্নান করার প্রচলন আছে।
  4. গর্ভধারণ ও সন্তান: ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, সহবাস শুধু ভোগ-বিলাসের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সৃষ্টি ও সনাতন ধর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
  5. নিষিদ্ধ সময়: হিন্দু ধর্মে একাদশী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও বিভিন্ন উপবাসের দিনে সহবাস নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

খ্রিস্টান ধর্মে সহবাসের বিধান

খ্রিস্টান ধর্মে সহবাসকে বিবাহের মাধ্যমেই বৈধ করা হয়েছে। বাইবেলে ব্যভিচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং পবিত্র বিবাহিত সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  1. বৈধতা: কেবল বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সহবাস অনুমোদিত।
  2. পবিত্রতা ও শুদ্ধতা: খ্রিস্টান ধর্ম মতে, সহবাস শুধুমাত্র ভালোবাসার প্রতীক নয়, এটি নতুন প্রাণ সৃষ্টির মাধ্যমও।
  3. সন্তান জন্মদান: ক্যাথলিক মতবাদে, সহবাসের মূল উদ্দেশ্য সন্তান জন্মদান এবং বিবাহিত জীবনে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ।
  4. ব্যভিচার নিষিদ্ধ: বাইবেলে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং ব্যভিচারকে গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
  5. সহবাসের পর পবিত্রতা: খ্রিস্টান ধর্ম মতে, সহবাসের পরে আত্মিক ও শারীরিক পবিত্রতার গুরুত্ব রয়েছে এবং এই সময় প্রার্থনা করা উত্তম।

উপসংহার

তিনটি ধর্মই সহবাসকে বিবাহের পর বৈধ বলে মনে করে এবং এতে কিছু নিয়ম ও শিষ্টাচার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামে এটি পবিত্র ও স্বামী-স্ত্রীর অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, হিন্দু ধর্মে এটি সংসার ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং খ্রিস্টান ধর্মেও এটি বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে বৈধ। তবে তিন ধর্মেই অবৈধ সম্পর্ক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে সহবাসকে গণ্য করা হয়েছে।