বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন উপনিবেশবিরোধী চেতনার অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর কবিতায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বক্তব্য এবং ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দৃশ্যমান।
১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ নামে একটি ধারালো ও সংগ্রামী সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে নজরুল তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন। এই পত্রিকাতেই তিনি প্রকাশ করেন বিখ্যাত কবিতা “আনন্দময়ীর আগমনে”, যা ছিল একেবারে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও আগ্রাসী কাব্যিক প্রতিবাদ।
এই কবিতায় তিনি ভারতমাতার আনন্দময়ী রূপে আবির্ভাব কল্পনা করেন, যিনি আসবেন অত্যাচারী ইংরেজদের ধ্বংস করতে। কবিতায় একদিকে দেবীমূর্তির শক্তির আরাধনা, অন্যদিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শ্লেষ ও ধিক্কার প্রকাশ পেয়েছে:
“মৃত্যু কেন ভয় করব, তুমি যে আনন্দময়ী মা!
ছিন্ন করে মেঘের আবরণে তুমি এসো রণভূমি পার হয়ে।”
এই কবিতা ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মহাষষ্ঠীর সংখ্যায় (১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২) প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর ব্রিটিশ সরকার এটিকে রাজদ্রোহী ও উসকানিমূলক বলে চিহ্নিত করে এবং নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি তখন ১ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
জেলখানায় থাকাকালীন নজরুল অনশন করেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনাও করেন, যার মধ্যে “রাজবন্দীর জবানবন্দি” একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
“আনন্দময়ীর আগমনে” শুধুমাত্র একটি কবিতা নয় — এটি হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক প্রতীকী প্রতিবাদ।
Please login or Register to submit your answer