জিব্রাল্টার প্রণালি (Strait of Gibraltar) বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূ-ভৌগোলিক অবস্থানের একটি। এটি ইউরোপ ও আফ্রিকার মাঝে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ প্রণালি, যা ভূমধ্যসাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই প্রণালির এক পাশে স্পেন (ইউরোপ) এবং অন্য পাশে মরক্কো (আফ্রিকা) অবস্থিত। তাই এটি সরাসরি ইউরোপ ও আফ্রিকার ভৌগোলিক সংযোগস্থল হিসেবেও পরিচিত।
ভূগোল ও অবস্থান:
জিব্রাল্টার প্রণালির সর্বনিম্ন প্রস্থ প্রায় ১৩ কিলোমিটার বা ৮ মাইল। এর উত্তরে স্পেনের দক্ষিণ উপকূল এবং দক্ষিণে মরক্কোর উত্তর উপকূল। মাঝখানে রয়েছে ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল “জিব্রাল্টার”। যদিও এটি স্পেনের উপকূলে, এটি একটি ব্রিটিশ Overseas Territory।
কৌশলগত ও সামরিক গুরুত্ব:
জিব্রাল্টার প্রণালিকে অনেকসময় “ভূমধ্যসাগরের দরজা” বলা হয়। এই প্রণালির উপর দিয়ে যাতায়াত করে এমন জাহাজগুলো ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে প্রবেশ বা প্রস্থান করতে পারে। ফলে এটি সামরিক ও বাণিজ্যিক উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে বহুবার এই প্রণালিকে কেন্দ্র করে সামরিক প্রতিযোগিতা ও উপনিবেশ স্থাপন ঘটেছে।
বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ এই প্রণালি দিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য পণ্যবাহী জাহাজ এই পথ ব্যবহার করে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। তাই এই অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অভিবাসন ও সামাজিক প্রভাব:
জিব্রাল্টার প্রণালি ইউরোপে অভিবাসনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ পথ হিসেবেও পরিচিত। অনেক আফ্রিকান মানুষ অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে এই প্রণালি পেরিয়ে। এর ফলে মানবপাচার, শরণার্থী সমস্যা, এবং মানবিক সংকটও প্রায়ই দেখা দেয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলটি বিভিন্ন সভ্যতার মিলনস্থল ছিল। ফিনিশীয়, কার্থেজীয়, রোমান, মুসলিম ও খ্রিষ্টান সকল সাম্রাজ্যের ছোঁয়া পেয়েছে এই অঞ্চল। ইসলামিক সভ্যতার স্পেন আগমনের অন্যতম পথ ছিল এই প্রণালি, যখন ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবনে জিয়াদ স্পেনে প্রবেশ করেন। তাঁর নাম থেকেই "জাবাল তারিক" (তারিকের পাহাড়) থেকে "জিব্রাল্টার" নামটি এসেছে।
Please login or Register to submit your answer