পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (PCJSS) মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংঘাত ও অস্থিরতা নিরসনে সহায়তা করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী—বিশেষ করে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের—নানা বৈষম্য, সাংস্কৃতিক অধিকার ও ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এই কারণে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। তারা ধাপে ধাপে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরতে থাকে এবং এর ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় তাদের সশস্ত্র শাখা ‘শান্তিবাহিনী’।
পরবর্তীতে প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র সংঘর্ষ, অপহরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিক অভিযানের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয়। অবশেষে এক বছর ধরে চলা আলোচনার পর ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো:
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন,
পার্বত্য জেলা পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি,
শান্তিবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ ও তাদের পুনর্বাসন,
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কমিশন গঠন।
এই চুক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি আঞ্চলিক জাতিগত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। যদিও চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে, তারপরও এটি শান্তির ভিত্তি রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বর্তমান সময়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায়, সাধারণ জ্ঞান বা সাম্প্রতিক ইতিহাস অংশে এই চুক্তির সময়কাল, পটভূমি এবং তাৎপর্য নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। এ ছাড়া যারা প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা উন্নয়ন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, তাদের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০২২ সালে আবারও আলোচনায় উঠে আসে এর প্রাসঙ্গিকতা এবং বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা। ফলে, শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি, জাতিগত সম্প্রীতি এবং উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Please login or Register to submit your answer