বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ—এই বাক্যটি কেবল সাহিত্যিক নয়, ভৌগোলিকভাবেও সত্য। দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং জনগণের জীবিকা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি প্রশ্ন হলো—"দীর্ঘতম নদী কোনটি?" তবে এই প্রশ্নের উত্তর একটিই নয়, বরং এটি সূত্র ও সংস্থাভেদে ভিন্ন হতে পারে।
নদী রক্ষা কমিশনের মতে, বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী হলো পদ্মা। পদ্মা গঙ্গা নদীর একটি শাখা, যা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে। এটি পরবর্তীতে যমুনা ও মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পদ্মা নদীর মোট দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে প্রায় ৩৫৬ কিলোমিটার। নদী রক্ষা কমিশন মূলত নদী ধারার অস্তিত্ব, তার প্রভাব এবং ভূমি ব্যবহারের ভিত্তিতে পদ্মাকে দীর্ঘতম হিসেবে গণ্য করে।
অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, দেশের দীর্ঘতম নদী হলো মেঘনা। এই নদীটি বরাক নদীর ধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে। এটি সরাসরি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর সম্পূর্ণ মূলধারা ও তার উপনদীগুলোর সমন্বয়ে মেঘনার মোট দৈর্ঘ্য ৩৯৮ কিলোমিটার হিসাব করে। তাদের মতে, ভৌগোলিকভাবে একটানা প্রবাহমানতা এবং পানির প্রবাহ অনুসারে মেঘনাই দীর্ঘতম।
এই দুইটি সংস্থার পার্থক্য মূলত নির্ভর করে নদীর ধারা ও উৎস কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে তার ওপর। এছাড়াও, বাংলাদেশের অনেক নদী মৌসুমভিত্তিক ও প্রবাহ পরিবর্তনশীল হওয়ায় হিসাবেও পার্থক্য দেখা দেয়।
ব্যবহারিক গুরুত্ব:
জলসম্পদ পরিকল্পনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘতম নদীর সঠিক চিহ্নিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ।
পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
মেঘনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বহু শিল্প অঞ্চল, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে।
তাই, পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে—দুটি মতভেদই সঠিক নির্ভর করে কোন উৎস থেকে প্রশ্ন এসেছে তা বুঝে উত্তর দেওয়া। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রস্তুতকারকের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে উত্তর দিতে হবে।
Please login or Register to submit your answer