বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের অন্যতম প্রধান উৎস হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। এটি একটি দাহ্য গ্যাসীয় পদার্থ, যা মূলত ভূগর্ভস্থ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টির বেশি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে তিতাস, হাবিগঞ্জ, বিবিয়ানা, কাইয়ামারা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন (CH₄)। এটি একটি হালকা, বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস, যা প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৯৫%-৯৭% পর্যন্ত অংশ জুড়ে থাকে। মিথেন খুব উচ্চমাত্রায় দাহ্য এবং এটি পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি হিসেবেও পরিচিত, কারণ এটি অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত করে।
মিথেনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসে অন্যান্য উপাদানও সামান্য পরিমাণে থাকে, যেমন– ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন, নাইট্রোজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড। তবে এসবের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে অতি ক্ষুদ্র। বাংলাদেশের গ্যাসের গুণগত মান খুবই ভালো বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশে রান্নার গ্যাস (সিএনজি), বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা ও শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এছাড়া, সড়ক পরিবহনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে সিএনজি (Compressed Natural Gas) ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, কৌশলগত দিক থেকেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তবে দিন দিন গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কমে আসছে, ফলে বিকল্প উৎস ও গ্যাস সংরক্ষণ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বর্তমানে এলএনজি (Liquefied Natural Gas) আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা চলছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস অর্থনীতি ও জ্বালানিনির্ভর জীবনের চালিকাশক্তি। এই গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন – যার দক্ষ ব্যবহার, সঠিক সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
Please login or Register to submit your answer