গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪–১৯১২) বাংলা নাট্যচর্চার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তিনি শুধু নাট্যকারই ছিলেন না, ছিলেন একজন দক্ষ অভিনেতা, নির্দেশক এবং প্রযোজক। তাঁর রচিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক বাংলা নাট্যসাহিত্যে ইতিহাসভিত্তিক নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এই নাটকটি ১৯০৫ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হয় এবং নাট্যরূপে বাঙালির জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই নাটকে তিনি ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনের ট্র্যাজিক পরিণতি তুলে ধরেছেন। নাটকটি কেবল ঐতিহাসিক তথ্য উপস্থাপন করে না, বরং নাটকীয় কৌশলে নবাবের চরিত্রকে রোমান্টিক বীরেরূপে গড়ে তোলে। গিরিশচন্দ্র সিরাজকে একটি ন্যায়পরায়ণ, সাহসী, বাঙালি চেতনার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি এমন এক সময়ে রচিত হয়েছিল যখন বাঙালি জাতিগত পরিচয়, স্বদেশপ্রেম এবং ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব জোরদার হচ্ছিল। ফলে নাটকটি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সে যুগের সাধারণ দর্শকের মনে বিপ্লবী উদ্দীপনা ছড়ায়।
গিরিশচন্দ্র ঘোষ নাট্যভাষার দিক থেকেও সাহসী ছিলেন। তিনি সাহিত্যের ভদ্রভাষার পাশাপাশি মঞ্চের উপযোগী সংলাপ ও নাটকীয়তা বজায় রাখতেন, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘ছোটদিদি’, ‘শ্রীচৈতন্য’, ‘বাল্যবিবাহ’ ইত্যাদি। তবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ তাঁর সেরা রচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং তা বাংলার জাতীয়তাবাদী সাহিত্যধারার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
Please login or Register to submit your answer