অন্যান্য

ডায়াবেটিস বহুমূত্র বা মধুমেহ রােগ

ডায়াবেটিস বহুমূত্র বা মধুমেহ রােগ: আমরা যখন কিছু খাই, এটি গ্লুকোজে পরিণত হয়ে রক্তের মাঝে আসে। প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নামে এক ধরনের হরমােন নির্গত হয়, যেটি রক্তের এই গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কারাে ডায়াবেটিস হলে প্যানক্রিয়াস যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না কিংবা শরীর ইনসুলিনকে ব্যবহার করতে পারে না। যে কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। মানুষের রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা হলাে ৪.০-৬.০ mMole] কিংবা (৭০-১১০ মি.গ্রা/ডেসি.লি.)।

ডায়াবেটিস হলে রক্তে এর পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনেক বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রােগ নয়। ডায়াবেটিস হৃদযন্ত্রের রক্তপ্রবাহ রােগের ওপর পরােক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের, যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনি, চোখ ইত্যাদির স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। দেখা গেছে ডায়াবেটিস রােগীদের করােনারি হৃদরােগ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

এটি হৃৎপিণ্ডকে অচল করে দেয় এবং রােগী স্ট্রোক হয়ে মারা যেতে পারে। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস রােগে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হয়। উচ্চ রক্তচাপ করােনারি হৃদরােগের পূর্বলক্ষণ। ডায়াবেটিস রােগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাদের করােনারি হৃদ্‌রােগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি থাকে। কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি যে কেউ যেকোনাে সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে, তবে চার শ্রেণির মানুষের ডায়াবেটিস বেশি হয়ে থাকে:

  • যাদের বংশে, যেমন: মা-বাবা সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
  • যাদের ওজন বেশি এবং শরীর মেদবহুল।
  • যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোনাে কাজ করে না।
  • দীর্ঘদিন যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করে।

ডায়াবেটিস রােগের লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • খুব বেশি পিপাসা লাগা।
  • বেশি ক্ষুধা লাগা এবং অতিমাত্রায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।
  • যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া এবং শীর্ণতা।
  • সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তি ও দুর্বলতা বােধ করা।
  • চামড়া শুকিয়ে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • শরীরের কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে, দেরিতে শুকানাে।

ডায়াবেটিস রােগীর পথ্য

ডায়াবেটিস রােগকে দমিয়ে রাখতে খাদ্যের ভূমিকা অসামান্য। ডায়াবেটিস রােগের জন্য ওষুধ সেবন করলেও রােগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যব্যবস্থা না থাকলে ওষুধ সেবন করেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। রােগীকে এমন খাদ্যদ্রব্য দিতে হবে, যা তার ন্যূনতম ক্যালরির চাহিদা পূরণ করবে কিন্তু এই খাদ্যের দ্বারা রক্তে ও প্রস্রাবে যাতে শর্করা বেড়ে না যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

ডায়াবেটিস প্রধানত তিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যথা: খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ সেবন এবং জীবন-শৃঙ্খলা।

(ক) খাদ্য নিয়ন্ত্ৰণ: মােটা লােকদের ডায়াবেটিস হলে তাদের ওজন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। ডায়াবেটিস রােগীদের একটুও চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না। তাদের এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা প্রােটিনসমৃদ্ধ (গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, বরবটি, মাশরুম, বাদাম, ডিম, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ইত্যাদি) এবং যেখানে শ্বেতসার কম থাকে।

(খ) ওষুধ সেবন: সব ডায়াবেটিস রােগীকেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক রােগীদের এ দুটি নিয়ম যথাযথভাবে পালন করলে রােগ নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। কিন্তু ইনসুলিননির্ভর রােগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হয়।

(গ) জীবন শৃঙ্খলা: শৃঙ্খলা ডায়াবেটিস রােগীর জীবন-কাঠি। তাকে এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে:

  • নিয়মিত ও পরিমাণমতাে সুষম খাবার খেতে হবে।
  • নিয়মিত ও পরিমাণমতাে ব্যায়াম করতে হবে।
  • নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button