সামাজিক বিজ্ঞান

ফরায়েজি আন্দোলন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে যেসব ধর্মীয় আন্দোলন হয়েছিল ফরায়েজি আন্দোলন সেগুলাের মধ্যে অন্যতম। ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি এটি ছিল কৃষক-আন্দোলন।

আর্থ-সামাজিক কারণসমূহ :

বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মুসলমান সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে চরম দুর্দশা নেমে আসে। কোম্পানি মুসলমানদেরকে সেনা বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য চাকরি থেকে বিতাড়িত করার ফলে অজস্র মুসলিম পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্ধারিত খাজনা আদায় ছাড়াও জমিদার, নায়েব, গােমস্তা, সরকারি কর্মচারীরা নানা ধরনের অত্যাচারের মাধ্যমে কৃষকসমাজকে পঙ্গু করে দেয়।

ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে জমিদারদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল হিন্দু। আর প্রজারা অধিকাংশ ছিল গরিব কৃষক। জমিদারগণ প্রজাদের ওপর অবৈধভাবে নানাপ্রকার কর ধার্য ও আদায় করত। ইংরেজরা বাজেয়াপ্ত নীতির’ দ্বারা কোটি কোটি টাকা মূল্যের নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত করায় যেমন সম্রান্ত অনেক পরিবার ধ্বংস হয়, তেমনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ে এবং কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস ও অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

তাছাড়া নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচারে নীলচাষিদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নীলকররা চাষিদের জোরপূর্বক নীলের চাষ করতে বাধ্য করত। ইংরেজ বিচারকদের পক্ষপাতিত্বের জন্য চাষিরা সুবিচার পেত না। মুসলমান সমাজের এ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধঃপতন দেখে যিনি এর সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসেন তিনি হলেন হাজী শরীয়তউল্লাহ।

তিনি যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, সে আন্দোলন ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। ইসলামের ‘ফরয সমূহ পালনের জন্য হাজী শরীয়তউল্লাহ জোর প্রচার চালান। এই ফরয হতেই এ আন্দোলনের নাম ফরায়েজি হয়েছে। হাজী শরীয়তউল্লাহর মৃত্যুর পরে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তাঁর সুযােগ্য পুত্র মুহসিনউদ্দীন ওরফে দুদু মিয়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button