ঈদুল আযহা, কুরবানি ও হজ

ঈদুল আযহা, কুরবানি ও হজ

ঈদুল আযহা, কুরবানি ও হজ

সময় বহমান স্রোতে আবারও ঈদ দোরগোড়ায়। মুসলমানদের দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার প্রধান ইবাদত হলো কুরবানি করা। অন্যদিকে, হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ । শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ ৷

ঈদুল আযহা

ঈদ অর্থ উৎসব বা আনন্দ, আর আযহা অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা । মহানবী (স.) ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাজ পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এ দিনের প্রথম কাজ হলো সালাত আদায় করা, এরপর কুরবানি করা । আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহা পালন করা হয়। ঈদের নামাজ দুই রাকাত। এটি ওয়াজিব যা জামায়াতের সাথে পড়তে হয়।

মুসলিমগণ এ নামাজ খোলা মাঠে বা মসজিদে আদায় করে থাকেন। ঈদের নামাজ সাধারণত সূর্য উদয়ের পর থেকে যোহরের ওয়াক্ত আসার মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করা হয়। ঈদুল আযহার বিশেষ আমলগুলো হলো—

  • গোসল, সুগন্ধি ও উত্তম পোশাক পরিধান করা;
  • তাকবিরে তাশরিক বলা;
  • ঈদের নামাজ;
  • কুরবানি;
  • কুরবানির গোশত খাওয়া ও খাওয়ানো ।
আরও পড়ুন :  বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন যে সকল বিষয়

তাকবিরে তাশরিক : জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) সকলের ওপর ফরজ নামাজের পরেই একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব । পুরুষরা উচ্চস্বরে ও স্ত্রীলোকগণ নীরবে পাঠ করবে। তাকবিরে তাশরিক হলো— ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

কুরবানি

আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইব্রাহীম (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে কুরবানি দিতে গিয়ে আত্মত্যাগের যে মহান দৃষ্টান্ত ও আদর্শ স্থাপন করেছেন, সেই স্মৃতিকে স্মরণ রেখে মহান আল্লাহর প্রেমের চেতনাকে প্রখর রাখার জন্য মুসলিম উম্মাহ কুরবানি দেয়। এ কুরবানি একদিকে যেমন আল্লাহর জন্য আত্ম-উৎসর্গের শিক্ষা দেয়, অপরদিকে অন্যের সাথে সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে।

আরবি কুরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। অর্থাৎ আল্লাহ তা’লার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই কুরবানি দেওয়া হয়। এটা আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। ঈদুল আযহার দিনে পশু যবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় বলে এ পশু যবেহ করাকেই কুরবানি বলা হয় ।

আরও পড়ুন :  Current Affairs December 2020 কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিসেম্বর ২০২০

কার উপর ওয়াজিব : ইসলামি বিধান মতে, বালেগ, মুকীম, স্বাধীন মুসলিমের ওপর কুরবানী ওয়াজিব, যিনি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হবেন। উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া এ ৬ শ্রেণির পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। কুরবানির ক্ষেত্রে নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ তথা ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কুরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কুরবানি করাই উত্তম ।

কুরবানির গুরুত্ব : “কুরবানি’ একটি আর্থিক ইবাদত। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সূরা হজ; আয়াত : ৩৪)। রাসূল (স) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবন মাজাহ)।

হজ

হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন বা স্তম্ভ। নামাজ, রোযা, যাকাত যেমন ফরজ ইবাদত, তেমনি আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীর জন্য হজ অন্যতম বরকতপূর্ণ অবধারিত কর্তব্য। হজ আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়ত করা, সংকল্প করা। ইসলামি শরীআতের পরিভাষা অনুসারে— নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট তারিখে মক্কার পবিত্র কা’বা শরিফ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে সা’ঈ করা, মিনায় অবস্থান করার নাম হজ।

আরও পড়ুন :  সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলন এবং আন্দোলনের আদর্শ ও উদ্দেশ্য

অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। হজের ফরজ তিনটি : ইহরাম বাঁধা, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ও তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা । • হজের ওয়াজিবসমূহ : মুজদালিফায় অবস্থান, সাতবার সাঈ করা, মিনায় জামারাসমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ, কুরবানি করা, মাথার চুল মুণ্ডানো ও বিদায়কালীন তাওয়াফ সম্পন্ন।

হজের গুরুত্ব : আল্লাহ তা’লা বলেছেন, “মক্কা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আল্লাহর জন্য হজ আদায় করা ফরজ।’ (সূরা আল ইমরান; আয়াত : ৯৭)। রাসূল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ পালন করে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলে না বা কোনো অশ্লীল কাজ করে না, সে হজ থেকে সে দিনের মতো এমন নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দান করে। (বুখারী ও মুসলিম)

Leave a Reply