নিরক্ষরতার কারণে কি ঘটে

নিরক্ষরতা একটি সামাজিক সমস্যা যা মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। পৃথিবীজুড়ে বহু মানুষ নিরক্ষর, যা তাদের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যের অবস্থা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশেও নিরক্ষরতা একটি বড় সমস্যা, যেখানে অনেক মানুষ লেখাপড়ার সুযোগ পায় না এবং তার ফলে তাদের জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, নিরক্ষরতার ফলে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং কীভাবে তা সমাধান করা সম্ভব।
নিরক্ষরতার মূল কারণ
নিরক্ষরতার প্রধান কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে, তবে মূলত নিম্নলিখিত কিছু কারণ উল্লেখযোগ্য:
১. অর্থনৈতিক অভাব: একটি বড় কারণ হলো অর্থনৈতিক সংকট। গরিব পরিবারে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ ও সংস্থান থাকে না। তাদের কাছে পরিবারিক দায়বদ্ধতা থাকে, যেমন খাবার, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা, যা লেখাপড়ার মতো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চেয়ে বেশি জরুরি মনে হয়। এর ফলে অনেক শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, আর পরবর্তীতে চাকরি বা জীবনের অন্য দিকগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনও কঠিন হয়ে পড়ে।
২. সামাজিক প্রতিবন্ধকতা: সমাজে অনেক সময় নিরক্ষরতার কারণ সামাজিক, ধর্মীয়, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতাও হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কম থাকে অনেক সমাজে, যেখানে তাদের প্রথমে পরিবারের কাজকর্ম বা অন্য সামাজিক দায়িত্বের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। এটি নিরক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য বড় একটি কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুন : যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে।- ব্যাখ্যা কর।
৩. সরকারি সহায়তার অভাব: সরকারের উদ্যোগ এবং সহায়তা না থাকলে নিরক্ষরতার হার বেড়ে যায়। যদি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী না করে, দরিদ্রদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সীমিত থাকে, এবং পর্যাপ্ত স্কুল বা শিক্ষক না থাকে, তবে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সরকারী দিক থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও উদ্দীপনা না পাওয়া অনেক মানুষের জন্য শিক্ষা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
নিরক্ষরতার প্রভাব
নিরক্ষরতার প্রভাবের ব্যাখ্যা করতে গেলে, এটি শুধুমাত্র ব্যক্তির জীবনে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সমগ্র সমাজের উপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা হলো:
১. অর্থনৈতিক প্রভাব:
নিরক্ষরতা, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, বেশিরভাগ মানুষকে ভালো চাকরি বা উচ্চ আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায়, কারণ আজকের যুগে বেশিরভাগ কাজের জন্য কিছু মৌলিক দক্ষতা যেমন পাঠ, লেখা এবং গণনা জানা প্রয়োজন। এতে করে একদিকে যেমন ব্যক্তির আয় কমে যায়, তেমনি সমগ্র দেশের অর্থনীতি কম উৎপাদনশীল হয়ে পড়ে।
২. স্বাস্থ্য সমস্যা:
নিরক্ষরতা মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান কমিয়ে দেয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য যেমন রোগ প্রতিরোধ, টিকা, চিকিৎসা পদ্ধতি ইত্যাদি জানার অভাবে তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এতে স্বাস্থ্য সমস্যা আরো জটিল এবং তীব্র হয়ে উঠতে পারে, যেমন মহামারী বা সংক্রামক রোগের ছড়িয়ে পড়া। শিক্ষিত মানুষের তুলনায় নিরক্ষর মানুষের মৃত্যুর হারও তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
৩. সামাজিক সমস্যাসমূহ:
নিরক্ষরতা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন, একজন নিরক্ষর ব্যক্তি আধুনিক সমাজে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না, যা তাদের সামাজিক যোগাযোগ বা নিজেকে প্রকাশের সুযোগ কমিয়ে দেয়। এমনকি, তারা রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সক্ষম না হওয়ায়, সমাজে তাদের অবদান কম হয়। এর ফলে, সমগ্র সমাজের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
৪. জন্মগত অসমতা:
নিরক্ষরতা শিশুদের মধ্যে শিক্ষা এবং জীবনের মান উন্নত করার সুযোগ কমিয়ে দেয়, যেহেতু নিরক্ষর পিতামাতারা তাদের সন্তানের শিক্ষা সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে তেমনভাবে সাহায্য করতে পারেন না। ফলস্বরূপ, তাদের ভবিষ্যতের সুযোগ কমে যায়, এবং সমাজে অভ্যন্তরীণ বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
৫. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব:
নিরক্ষরতা একটি ব্যক্তি বা জনগণের আত্মবিশ্বাস এবং স্বমর্যাদা কমিয়ে দেয়। তারা সমাজে নিম্নস্তরের মনে হতে পারে এবং তাদের আত্মমুল্যায়ন কমতে থাকে, যা মানসিক অবসাদ বা হতাশার কারণ হতে পারে।
সুতরাং, নিরক্ষরতা শুধুমাত্র ব্যক্তি বা পরিবারের সমস্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্তরেও গভীর প্রভাব ফেলে। এর প্রতিকার করতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি এবং প্রতিটি স্তরে শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
নিরক্ষরতা ও নারীশিক্ষা
নারীশিক্ষা ও নিরক্ষরতা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের শিক্ষার অভাব, বিশেষত গ্রামীণ এবং দরিদ্র এলাকায়, শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতি বাধাগ্রস্ত করে না, বরং একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতিতেও সমস্যা তৈরি করে। নারীরা যখন শিক্ষা লাভ করে, তখন তারা নিজের জীবনের উন্নতির পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশে নারীদের শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেটিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতাও থাকতে পারে।
সরকারী উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি শিক্ষার জন্য নগরের মেয়েদের জন্যও নানা সাহায্য ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন শিক্ষাবৃত্তি এবং ফ্রি স্কুল সার্ভিস।
বেসরকারি উদ্যোগ
বেসরকারি সংস্থাগুলিও নিরক্ষরতা দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখছে। এই সংস্থাগুলোর অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রকল্প পরিচালনা করছে, যেখানে নারী শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার গুরুত্ব
শিক্ষা শুধু একেকটি মানুষের জীবন পাল্টায় না, এটি পুরো সমাজের অগ্রগতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা শিক্ষা লাভ করলে তারা তাদের পরিবারে উন্নতি আনতে পারে, এবং তাতে পুরো সমাজের বিকাশ ঘটে। নারী শিক্ষার মাধ্যমে জাতির শিকড় মজবুত হয়ে ওঠে, যা দেশের সার্বিক উন্নতি সম্ভব করে তোলে।
এভাবে, নিরক্ষরতা দূরীকরণের মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সম্ভব, এবং নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতি আরও শক্তিশালী হতে পারে।
FAQ (Frequently Asked Questions)
নিরক্ষরতা একটি গভীর সামাজিক সমস্যা যা দেশের উন্নতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করে। নিরক্ষরতার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ব্যাখ্যামূলক আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো:
- নিরক্ষরতা কি?
উত্তর: নিরক্ষরতা এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি লেখাপড়া বা পড়াশোনা করতে অক্ষম। এর ফলে, তারা মৌলিক দস্তাবেজ যেমন চিঠিপত্র, সরকারি নোটিশ, বিল, বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট পড়তে বা বুঝতে পারেন না। এই অবস্থা ব্যক্তির জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে বেশ ক্ষতিকর, কারণ তারা নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত থাকে এবং তার ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনে নানা বাধার সম্মুখীন হয়।
- নিরক্ষরতার প্রধান কারণ কী?
উত্তর: নিরক্ষরতার প্রধান কারণ হলো:
- অর্থনৈতিক সংকট: যদি কোন পরিবারের আর্থিক অবস্থান ভালো না হয়, তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা খাতে অর্থ ব্যয় করতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে বিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা থাকে না।
- সামাজিক বাধা: অনেক সময় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে নারীরা বা অল্প শিক্ষিত জনগণ শিক্ষা গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হন। যেমন, কিছু অঞ্চলে পুরুষদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, নারীরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে থাকে।
- শিক্ষার অভাব: কিছু অঞ্চলে বিদ্যালয়ের অভাব, পর্যাপ্ত শিক্ষকের সংকট বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত দুর্বলতা নিরক্ষরতা সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক জায়গায় স্কুলের অবস্থান দূর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না।
- নিরক্ষরতা সমাজে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?
উত্তর: নিরক্ষরতা সমাজে অনেক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে:
- অর্থনৈতিক সংকট: অশিক্ষিত মানুষকে শ্রম বাজারে কম পারিশ্রমিকের কাজ করতে হয়। এর ফলে তারা আয়ের সুযোগ কম পায় এবং সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: অশিক্ষিত মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত থাকেন, যার ফলে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতার অভাব থেকে তাদের মধ্যে রোগব্যাধির বিস্তার ঘটে।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: নিরক্ষরতা ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি অশিক্ষিত মানুষ সমাজের অন্যান্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে, কারণ তারা তথ্যের অভাবে সমাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
- নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতা বেশি কেন?
উত্তর: নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতা বেশি হওয়ার মূল কারণ হলো:
- সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বাধা: অনেক সমাজে নারীদের শিক্ষা গ্রহণে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সংস্কৃতি এবং প্রথার কারণে নারীদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার সুযোগ কম হয়।
- অর্থনৈতিক বাধা: যদি পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকে, তবে প্রথমে ছেলেদের শিক্ষা দেওয়া হয় এবং মেয়েদের শিক্ষা ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তা কম মনে করা হয়।
- পরিবারের দায়-দায়িত্ব: নারীদের পরিবারের অন্য কাজ যেমন বাচ্চাদের দেখাশোনা, রান্নাবান্না, বা ঘরের কাজের দায়িত্ব পালন করতে হয়, যার কারণে তাদের জন্য পড়াশোনার সময় খুবই কম থাকে।
- বাংলাদেশের নিরক্ষরতার হার কত?
উত্তর: বাংলাদেশের নিরক্ষরতার হার এখনও উচ্চ, তবে গত কয়েক দশকে এতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নিরক্ষরতার হার ধীরে ধীরে কমছে। বাংলাদেশের সরকার, বিভিন্ন এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থা নিরক্ষরতা দূর করার জন্য কাজ করছে, তবে ব্যাপকভাবে এটি দূর করা এখনও চ্যালেঞ্জিং।
- কীভাবে নিরক্ষরতা দূর করা যায়?
উত্তর: নিরক্ষরতা দূর করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: সরকারকে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও নিরক্ষরতা দূর করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণকে শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব বোঝাতে হবে এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া ও অন্যান্য প্রচারণার মাধ্যমে কাজ করা যেতে পারে।
- শিক্ষার সুযোগ তৈরি: সরকার এবং এনজিওগুলোর উচিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পাঠশালা স্থাপন করা, যাতে প্রত্যেকেই সহজেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
- নিরক্ষরতা সমাজের উন্নতিতে কীভাবে বাধা সৃষ্টি করে?
উত্তর: নিরক্ষরতা সমাজের উন্নতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি হলে:
- কর্মসংস্থান সমস্যার সৃষ্টি হয়। অশিক্ষিত লোকেরা দক্ষতার অভাবে উন্নত চাকরি পেতে পারেন না, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।
- স্বাস্থ্য খাতে ঝুঁকি বাড়ে। তারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে না, যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং রোগের বিস্তার ঘটে।
- সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। অশিক্ষিত মানুষ সমাজে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে সামাজিক অস্থিরতা এবং অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- নারী শিক্ষা কেন জরুরি?
উত্তর: নারী শিক্ষা সমাজের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিক্ষিত নারী:
- নিজের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়।
- নিজের এবং পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়।
- জাতির উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। দেশের জন্য সঠিক নেতৃত্ব, সামাজিক পরিবর্তন, এবং নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে নারী শিক্ষা অপরিহার্য।
- কীভাবে সরকার নিরক্ষরতা মোকাবেলা করছে?
উত্তর: সরকার বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচি চালু করেছে যাতে নিরক্ষরতা দূর করা যায়:
- গণশিক্ষা প্রকল্প: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজ প্রবেশাধিকার এবং অভ্যন্তরীণ মানোন্নয়ন।
- শিক্ষা প্রকল্প: ক্ষুদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং স্কুল তৈরি।
- অভিনব উদ্যোগ: ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার ও খোলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
- বেসরকারি সংস্থাগুলি কীভাবে সহায়তা করছে?
উত্তর: বেসরকারি সংস্থাগুলি নিরক্ষরতা দূর করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে:
- শিক্ষা কর্মসূচি: গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষা প্রকল্প চালু করা।
- নারী শিক্ষা উন্নয়ন: বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি এবং তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সুবিধা দেওয়া।
- প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: দক্ষতা উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ।
উপসংহার:
নিরক্ষরতা সমাজের একটি গুরুতর সমস্যা যা শুধু ব্যক্তিগত জীবনকেই নয়, পুরো সমাজের অগ্রগতি ও উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি আর্থিক সংকট, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে। নারীরা বিশেষভাবে এর শিকার হন, কারণ তাদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা রয়েছে। বাংলাদেশের নিরক্ষরতার হার এখনও উল্লেখযোগ্য, তবে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলির নানা উদ্যোগের মাধ্যমে এর হার কমানোর প্রচেষ্টা চলছে।
নিরক্ষরতা দূর করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। শিক্ষার সহজলভ্যতা, শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা হলে, নিরক্ষরতা অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। নারী শিক্ষা জাতির উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
অতএব, নিরক্ষরতা দূরীকরণে একসঙ্গে কাজ করে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে সবার জন্য শিক্ষা সমানভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং সমাজে সব ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।