ফ্রান্সে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার শুরু

ফ্রান্সের একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অন্তত ২৯৯ রোগীকে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম জো লু স্কোয়ারেনক, যার বয়স বর্তমানে ৭৪ বছর। অভিযোগে বলা হয়েছে, তাঁর দ্বারা নিপীড়নের শিকার হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই শিশু ছিল, এবং অনেককে অচেতন অবস্থায় নিপীড়ন করা হতো।
জো লু স্কোয়ারেনক ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শল্যচিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি উন্মুক্ত আদালতে তাঁর বিচার শুরু হবে। তবে, যেসব সাক্ষী শিশু বয়সে তাঁর দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বন্ধ দরজার ভেতর।
আঞ্চলিক প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় জো নিজেই বেশ কয়েকটি ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন এবং কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছেন, যা তিনি অপরাধ গোপন রাখতে ব্যবহার করতেন।
নিপীড়নের শিকার রোগীদের গড় বয়স ছিল ১১ বছর। তবে, অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি এক বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করেছেন এবং ৭০ বছর বয়সী একজনকে যৌন নিপীড়ন করেছেন।
আরো পড়ুন : গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মমতা: ৮০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনিকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পশ্চিম ফ্রান্সের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় তিনি এসব অপরাধ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ ও ১৮৯টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
জোয়ের নিপীড়নের শিকার ২৯৯ জনের মধ্যে ২৫৬ জনই ছিল ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন। ২০২০ সালে চার শিশুকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাঁকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ওই চার শিশুর মধ্যে দুজন তাঁর ভাতিজি ছিল।
অনেক ভুক্তভোগী অনেক বছর পর বুঝতে পেরেছেন যে তাঁরা জোয়ের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তবে তাঁরা সবাই এই বিচার কার্যক্রমের অংশ হতে চান না। অনেকেই আশা করছেন, এই বিচার প্রক্রিয়ায় সত্য প্রকাশ পাবে।
জোয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রথম আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন তাঁর প্রতিবেশীর ছয় বছরের এক শিশু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তদন্তে উঠে আসে যে, ১৯৯০-এর দশক থেকেই তিনি তাঁর দুই ভাতিজি ও চার বছর বয়সী এক রোগীকে নিপীড়ন করেছেন।
তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে অনেকগুলো পুতুল, যা তিনি যৌন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেন, এবং প্রায় তিন লাখ পর্নোগ্রাফি ছবি।
২০০৫ সালে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি ডাউনলোডের অভিযোগে তিনি চার মাসের কারাদণ্ড পেলেও, তাঁর চিকিৎসা পেশায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
জো বিবাহিত ছিলেন এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে তাঁর তিন সন্তান জন্ম নেয়। ২০০০-এর দশকের শুরুতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যান, তবে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ২০২৩ সালে ঘটে।
২০১৯ সালে জোয়ের সাবেক স্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি কখনো স্বামীকে সন্দেহ করেননি, যদিও প্রতিবেশী শিশুদের প্রতি তাঁর আচরণকে অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘জো শয়তানের কবলে পড়েছে… আমি কখনো তাকে সন্দেহ করিনি।’