বহিস্থ উৎস ও বহিস্থ অর্থায়নের স্বল্পমেয়াদি উৎস

বহিস্থ উৎস ও বহিস্থ অর্থায়নের স্বল্পমেয়াদি উৎস

বহিস্থ উৎস

বহিস্থ তহবিল বলতে প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনাে উৎস, যেমন: ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তহবিল সংগ্রহ করাকে বুঝায়। এটা তহবিল সংগ্রহের একটা জনপ্রিয় উৎস। ব্যাংক ঋণের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আছে।

প্রথমত: ব্যাংক ঋণের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, উক্ত মেয়াদের মধ্যে ঋণ ব্যবহার করে সুদাসল ফেরত দিতে হয়।

দ্বিতীয়ত: সুদের হার সুনির্দিষ্ট থাকে, যা দীর্ঘকালব্যাপী পরিবর্তন করা হয় না।

তৃতীয়ত: নিয়মিতভাবে সুদের অর্থ ও কিস্তি পরিশােধ এবং মেয়াদান্তে আসল পরিশােধ করা ব্যবসায়ের জন্য বাধ্যতামূলক। ব্যবসায়টি যদি লাভজনক নাও হয় তবু এই সকল অর্থ পরিশােধ করতে হবে।

এছাড়া ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার বা বন্ড বিক্রয় করেও একই ধরনের তহবিল সংগ্রহ করা যায়। অগ্রাধিকার শেয়ার বিক্রয় করে তহবিল সংগ্রহ করাও তহবিল সংগ্রহের বহিস্থ উৎস হিসেবে পরিচিত।

তহবিল সংগ্রহের বাহ্যিক উৎসগুলাে বেশ জনপ্রিয়। এর দুটি কারণ উল্লেখযােগ্য

  • ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হলে ঋণের সুদ মােট লাভ থেকে প্রদান করার পর যে লাভ অবশিষ্ট থাকে, সেই লাভের উপর কর প্রদান করতে হয়। ফলে প্রদেয় করের পরিমাণ কম হয়।
  • ছােট প্রতিষ্ঠানগুলাের পক্ষে অভ্যন্তরীণ অর্থসংস্থান অনেক সময় প্রয়ােজনীয় বিনিয়ােগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হয়ে যায়, ফলে বহিস্থ অর্থসংস্থানই তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন :  ডেটা এনক্রিপশন কী? অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্টের মধ্যে পার্থক্য লিখো।

তবে বহিস্থ তহবিলের একটা অসুবিধা হলাে এর সুদ প্রদান বাধ্যতামূলক। আগেও বলা হয়েছে যে ব্যবসায়টি মুনাফা অর্জন করুক বা নাই করুক, ঋণের সুদ ও কিস্তি অবশ্যই প্রদান করতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করলে এই অসুবিধা সৃষ্টি হয় না। বহিস্থ তহবিল মেয়াদের ভিত্তিতে সাধারণত ৩ প্রকার:

  • স্বল্পমেয়াদি,
  • মধ্যমেয়াদি ও
  • দীর্ঘমেয়াদি।

এবার আমরা এই তিন ধরনের অর্থায়ন সম্পর্কে ধারণা লাভ করব।

আরও পড়ুন :  বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপুর্ণ কিছু বাংলা শব্দের অর্থ

বহিস্থ অর্থায়নের স্বল্পমেয়াদি উৎস

স্বল্পমেয়াদ বলতে এক বছর বা এক বছরের কম সময়কে বুঝানাে হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ অর্থায়ন মূলত স্বল্পমেয়াদি উৎস হতে সংগ্রহ করা হয়, যা এক বছর বা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে পরিশােধযােগ্য। স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কিছু সুবিধা থাকে। যেমন :

প্রথমত, স্বল্পমেয়াদি উৎস হতে অর্থ সংস্থানের খরচ তুলনামূলকভাবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুইই হতে পারে। যেমন: বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের জন্য স্বল্পমেয়াদে তুলনামূলকভাবে সুদের হার বেশি প্রদান করতে হয়। আবার বিভিন্ন ঋণমুক্ত উৎস যেমন: বাকিতে পণ্য ক্রয়, বকেয়া মজুরির মাধ্যমে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলাে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারে। যার কোনাে মূলধনি খরচ নেই। (মূলধনি খরচ সম্পর্কে পরবর্তী অধ্যায়গুলােতে বিস্তারিত জানতে পারব)

আরও পড়ুন :  মেট্রোরেল : যোগাযোগে দ্রুততর গতি ও প্রগতি

দ্বিতীয়ত, স্বল্পমেয়াদি অর্থ আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে দ্রুততম ও সরল প্রক্রিয়া। পক্ষান্তরে, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থ আদান-প্রদানের জন্য অনেক সময় ব্যয় ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।

তৃতীয়ত, যেসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পণ্য দ্রব্যের চাহিদা এক বছর সময়ের মধ্যে অতি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ও অর্থায়নের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা যায় না। যেমন: ফ্যাশন হাউসগুলাের চাহিদার দ্রুত পরিবর্তনশীলতার কারণে পণ্য উৎপাদনের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে, ফলে একসাথে কম পরিমাণে উৎপাদন করায় এদের অর্থ বিনিয়ােগের পরিমাণও কম হয়। এ ধরনের ব্যবসায় স্বল্পমেয়াদি উৎস হতে অর্থসংস্থান করা সুবিধাজনক।

এবার আমরা স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের উৎসগুলাে আলােচনা করব। এই মেয়াদের অর্থায়নের উৎসগুলােকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এই দুভাগে ভাগ করা যায়। নিচে আমরা প্রথমে স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস ও পরে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস আলােচনা করব।

Leave a Reply