বাংলা রচনা আমার দেখা নদী

বাংলা রচনা আমার দেখা নদী

আমার দেখা নদী

নদীর কথা উঠলেই একটি নদীই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে,তার নাম শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যা আমার প্রিয় নদী। আমাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ঠিক শীতলক্ষ্যা নদীর পাশেই। শীতলক্ষ্যা আমার জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শীতলক্ষ্যা নদীর রূপ একেক ঋতুতে একেক রকম।

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন নদীর দুই পাশে জেগে ওঠে চর। সেখানে কৃষকেরা আলু, মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি চাষ করে। আমরা সকালে গরু-ছাগল চরাতে নিয়ে যাই সেই চরে। দুপুরবেলা নদীতে দাপাদাপি করে গােসল করি। চরের বালিতে শুয়ে বিশ্রাম নিই, আবার ঝাপিয়ে পড়ি নদীতে। যারা বয়সে একটু বড়, তারা বাজি ধরে সাঁতরে নদী পার হয়।

আরও পড়ুন :  অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান বই থেকে ৫টি সৃজনশীল প্রশ্ন

আমরা হাততালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিই। নদীর বুক চিরে যখন বড় বড় জাহাজ চলে যায়, আমরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি। মায়ের মুখে শুনেছি, এ-নদীতে এক সময় কুমির ছিল। কিন্তু এখন আর কুমির দেখা যায় না, তবে মাঝে মাঝেই শুশুক ভেসে উঠেই আবার ডুব দেয়। বর্ষাকালে শীতলক্ষ্যা নদী কানায় কানায় ভরে যায়।

এসময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে। বড় বড় ঢেউ তীরে এসে আঘাত করে। অনেক সময় নদীর পানি বেশি বেড়ে গেলে দুই পাশের গ্রাম, ফসলের মাঠ সব ডুবে যায়। তখন আমাদেরকে হয় ঘরের চালে, অথবা নৌকায় আশ্রয় নিতে হয়। এসময় নদীর রূপ দেখলে আমার ভয় করে।

আরও পড়ুন :  পিএসসি (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদের প্রশ্ন সমাধান

তবে বাবা প্রায়ই ছােট ডিঙি নৌকায় চড়ে খুব সহজেই চলে যায় দূরদূরান্তে। আমরা বাড়িতে ঢুকে-পড়া পানিতে সাঁতার কেটে গােসল করি।। শরক্কালে শীতলক্ষ্যা আবার অন্য রূপ ধরে। তখন নদীর দুই পাশে, যত দূর চোখ যায় কাশফুল ফুটে থাকে। কাশবনের ভেতরে অনেক পাখি বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে।

আমরা বিকেল বেলা নৌকায় চড়ে নদীর বুকে নেমে পড়ি। সন্ধ্যাবেলা যখন পাখিরা বাসায় ফিরে আসে, তখন তাদের কলকাকলিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। আমরা নৌকার পাটাতনে শুয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখি। সে এক অপরূপ দৃশ্য। রাতে কাশবনে শেয়াল ডাকে- হুক্কা হুয়া করে।

শীতকালে অনেক বেলা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার বুকে কুয়াশা জমে থাকে। এসময় নদীটাকে অনেক রহস্যময় লাগে। এ-সময় নদীতে চর জাগা শুরু হয়। আমরা খাড়ি পেরিয়ে চরে চলে যাই মাছ ধরতে সন্ধ্যা হতে-নাহতেই নদীটি আবার কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে।

আরও পড়ুন :  কুকুরে কামড়ালে করণীয়

শীতলক্ষ্যা নদী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ-নদীতেই রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান নদীবন্দর। নদীর পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারখানা। অনেক বড় বড় জাহাজ চলে যায় নদী দিয়ে।

তবে শীতলক্ষ্যা নদী দিন দিন দূষিত হয়ে যাচ্ছে, যা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করেই এর দুই তীরের মানুষের জীবন গড়ে উঠেছে। আমি এই নদীকে ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। শীতলক্ষ্যা যেন আমার জীবনেরই অংশ।

Leave a Reply