বিশ্বগ্রাম কী? প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাক-ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ সম্ভব- ব্যাখ্যাকরো।

দৃশ্যকল্প-১: বর্তমানে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক অপরাধ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধ ও অনিবন্ধিত SIM ব্যবহার দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত SIM এর সঠিক মালিকানা শনাক্ত না হওয়ায় অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ পদ্ধতিতে SIM নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দৃশ্যকল্প-২: কৃষি গবেষক ড. আবিদ হাসান উদ্ভাবিত বীজ দিয়ে চাষ করে একজন কৃষক পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ফলন পেল। তার উদ্ভাবিত বীজ, কৃষি অধিদপ্তর অন্যান্য কৃষকদের কাছে সরবরাহ করে, ফলে ধানের বাম্পার ফলন হয়।
ক. বিশ্বগ্রাম কী?
খ. প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাক-ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ সম্ভব- ব্যাখ্যা করো!
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত SIM নিবন্ধন কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে তার প্রক্রিয়া লেখো ।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ গবেষণায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে- বিশ্লেষণ করো।
ক. বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারস্পরিক চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করতে পারে ও একে অপরকে সেবা করতে পারে।
খ. প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা কল্পবাস্তবতা বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে নিরাপদে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ অনেকখানি সম্ভব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারী সম্পূর্ণ একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তথ্য আদান-প্রদানকারী বিভিন্ন ডিভাইস সংবলিত চশমা, headsets, gloves ইত্যাদি পরিধান করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ৰাস্তবে উপলব্ধি করে।
গ. উদ্দিপকে বর্ণিত SIM নিবন্ধন বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে করা হয়েছে।
বায়োমেট্রিক্স হচ্ছে ব্যাক্তি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে মানুষের কতগুলো জৈবিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করা হয় । এক্ষেত্রে বেশকিছু বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়। যেমন: জৈবিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য: ফিংগার প্রিন্ট, হ্যান্ড জিউমেট্রি, আইরিস বা রেটিনা স্ক্যান, ফেইস রিকগনিশন, ডিএনএ।
আচরণগত বৈশিষ্ট্য: ভয়েস রিকগনিশন, সিগনেচার ভেরিফিকেশন, টাইপিং কি-স্ট্রোক । তবে বাংলাদেশে SIM নিবন্ধন শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ফিংগার প্রিন্ট পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে।
বায়োমেট্রিক্স সিস্টেম একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এর জন্য আগে থেকে একটি সফটওয়্যার তৈরি করে নিতে হয় এবং যে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হবে তার জন্য উপযুক্ত হার্ডওয়্যার অর্থ্যাৎ স্ক্যানিং ডিভাইস প্রয়োজন হয়। বায়োমেট্রিক সিস্টেম দুটি পর্যায়ে কাজ করে। প্রথমত, কোনো ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ডেটা বায়োমেট্রিক ডিভাইস দ্বারা স্ক্যান করে ভেরিফিকেশনের জন্য ডেটাবেজে রেখে দেয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, ভেরিফিকেশনের সময় উক্ত ব্যক্তির স্ক্যানকৃত বায়োমেট্ৰিক ডেটা, ডেটাবেজে রক্ষিত ডেটার সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। যদি নতুন স্ক্যানকৃত ডেটা ডেটাবেজে রক্ষিত ডেটার সাথে পুরোপুরি মিলে যায় তাহলে সিস্টেমটি উক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারে। আর না মিললে উক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেনা। ফলে সিম নিবন্ধনে একক ও সঠিক ব্যক্তিকে সহজে সনাক্তকরণ করা যায়।
ঘ. ড. আবিদ হাসানের গবেষণায় ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে বংশগতির প্রযুক্তিবিদ্যা । যে পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো জীবের জিনোমের মধ্যে নতুন জিন যোগ করা বা কোনো জিন অপসারণ করা বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়, সে পদ্ধতিকে জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়।
এক্ষেত্রে ড. আবিদ হাসান গবেষণায় থাকাকালীন অবস্থায় বীজের গবেষণা কাজে বায়োইনফরমেটিক্সকে কাজে লাগিয়ে বীজের জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনোম কোড সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। পরবর্তীতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে বীজের জীনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে নতুন জাতের উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করেছেন যা বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করছে এবং কৃষক নতুন জাতের বীজ থেকে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে।
উন্নত বীজ উৎপাদন ছাড়াও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলছে। যেমন: বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব থেকে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ। মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কৃষিবিজ্ঞানিরা অধিক ফলনশীল উন্নতমানের খাদ্যদ্রব্য (ধান, মটর, শিম ইত্যাদি) উৎপাদন করছে।
নানা ধরনের বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নষ্ট করে ফেলা যাচ্ছে । ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অপরাধি সনাক্তকরণ এবং সন্তানের পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ণয় করা যায় । টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে পাতা থেকে গাছ তৈরি অথবা প্রাণীদেহের বিশেষ কোষগুচ্ছ থেকে কোনো বিশেষ অঙ্গ তৈরির কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
রিকম্বিনেট ডিএনএ তৈরি করার মাধ্যমে প্রয়োজন মতো ও পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ মানব ইনসুলিন ও মানুষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন উৎপাদন করা যাচ্ছে।