হাজী মুহম্মদ মুহসীন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

হাজী মুহম্মদ মুহসীন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

যে দানবীর বাংলার দরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও তাদের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিপুল সম্পত্তি মুক্তহতে দান করেছেন, তিনি হলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন। সততা, সাধুতা, ধর্মপরায়ণতা, কর্তব্যপরায়ণতা, পরােপকারিতা ইত্যাদি ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের জন্য তিনি দান করেছেন তাঁর ঐশ্বর্য। দানশীলতার জন্য তিনি দানবীর’ ও বাংলার হাতেমতাই’ নামে সুপরিচিত। ১৭৩২ সালে হুগলি জেলার এক সভ্রান্ত ঐশ্বর্যশালী পরিবারে হাজী মুহম্মদ মুহসীন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ধর্ম ও জ্ঞান অন্বেষণের জন্য হাজী মুহম্মদ মুহসীন ত্রিশ বছর ধরে ইরান, মিসর ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।

আরও পড়ুন :  Current Affairs April 2022 Bangladesh and International Affairs

দেশে ফেরার পথে তিনি পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। পিতৃসম্পত্তি ও পরলােকগত বােন মুনুজানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে মুহসীন প্রচুর ঐশ্বর্যের মালিক হন। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। সমাজের জনহিতকর কাজে তিনি সমত সম্পত্তি ব্যয় করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত প্রসিদ্ধ ইমামবাড়া। তার জনহিতকর কার্যাবলির অন্যতম নিদর্শন।

শিক্ষা বিস্তারে দান :

বাংলার দরিদ্র মুসলমানদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য মুহসীনের দান অতুলনীয় ও চিরস্মরণীয়। গরিব মেধাবী মুসলমান ছাত্ররা যাতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সে জন্য তিনি কলকাতায় ১৮০৬ সালে তার তল্কালীন এক লক্ষ ছাপান্ন হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি দিয়ে মুহসীন ট্রাস্ট গঠন করেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মুহম্মদ মুহসীন ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন তা কার্যকর হয়নি। সকল সম্প্রদায়ের ছাত্ররা শিক্ষার জন্য এই অর্থ লাভ করত।

আরও পড়ুন :  জাতীয় ফুল শাপলা

অধঃপতিত দরিদ্র মুসলমান সমাজে শিক্ষা বিস্তারের যে উদ্দেশ্যে মুহসীন তার সম্পত্তি দান করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। অবশেষে ১৮৭৩ সালে নওয়াব আব্দুল লতিফ, স্যার উইলিয়াম হান্টার প্রমুখ ব্যক্তিদের আন্তরিক চেষ্টায় মুহসীন ট্রাস্টের অর্থ শুধু বাংলার মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে এবং গরিব ও মেধাবী মুসলমান ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদানে ব্যয় করার ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন :  বিসিএস প্রস্তুতির প্রাককথন

ফলে শত শত দরিদ্র মেধাবী মুসলমান ছাত্র এ ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি লাভ করে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অধ্যয়ন করার সুযােগ পায়। মুসলমানদের শিক্ষার জন্য হাজী মুহম্মদ মুহসীন হুগলি কলেজ ও হুগলি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এসব প্রতিষ্ঠান মুহসীনের সম্পত্তির আয় দিয়ে পরিচালিত হত। এছাড়া মুহসীন সকল ধর্মের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য করেন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। এই দানশীল এবং পরােপকারী ব্যক্তি ১৮১২ সালে ইন্তেকাল করেন।

Leave a Reply