সাধারণত কর্মহীনতাকে বেকারত্ব বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ হতে বেকারত্ব বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বােঝায়, যাতে কর্মক্ষম ব্যক্তি বর্তমান মজুরিতে কর্মে ইচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও কর্মে নিয়ােগ লাভে সক্ষম হয় না। অর্থাৎ কর্মক্ষম ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত কর্মহীনতাকে সমাজবিজ্ঞানে বেকারত্ব বলে। অধ্যাপক পিগু (Pigu) বলেন, “যখন কর্মক্ষম লােকেরা যােগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে চায় অথচ কাজ পায় না তখন সে অবস্থাকে বেকারত্ব বলা হয়।”
বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ :
বর্তমান বাংলাদেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই বেকার। এ দেশে প্রায় ১.৫ কোটি লােক বেকার। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে বাংলাদেশে মূলধনের অভাব এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বেকারত্বের প্রধান কারণ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু উপরের ২টি কারণ ছাড়া আরাে বহুবিধ কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যার প্রধান প্রধান কারণগুলাে বর্ণনা করা হল
১। জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা : বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষিত বেকার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভাব বেকার সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
৩। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য এ দেশে বিদেশি বিনিয়ােগ না হওয়ায় কলকারখানা গড়ে ওঠে না বলে এ দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না।
৪। মূলধনের অভাব : এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম বলে সঞ্চয়ের হারও কম। সঞ্চয় কম বলে বিনিয়ােগ কম।
৫। কারিগরি জ্ঞানের অভাব : বাংলাদেশে বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে সে অনুপাতে দক্ষ শ্রমিকের যােগান দেওয়া সম্ব হয় না। ফলে অদক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে থাকে।
৬। চাকরি-নিয়ােগ অধ্যাদেশ: মাঝে মাঝে সরকার চাকরি-নিয়ােগ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দেশে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগ বন্ধ ঘােষণা করায় এদেশে সমস্যা আরাে জটিল হয়ে পড়ে।
৭। অনুন্নত কৃষিব্যবস্থা : বাংলাদেশের অধিকাংশ লােকই প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে অনুন্নত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু আমাদের দেশের কৃষি মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরশীল। তাই বৃষ্টিপাত কম হলে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। ফলে বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়।
৮। কুটিরশিলের অভাব : দেশীয় কাঁচামাল ও প্রযুক্তিনির্ভর কুটিরশিল্পের প্রসার হয়নি এদেশে। যেগুলাে আছে সেগুলােও পুঁজির অভাবে বিলুপ্তির পথে। তাই এদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল কুটিরশিল্পের প্রায় বিলুপ্তি।
প্রতিকার :
বাংলাদেশের মতাে দরিদ্র দেশের পক্ষে সীমিত সম্পদ নিয়ে বেকারত্ব মােকাবেলা করা খুবই কঠিন কাজ। দীর্ঘ ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ব্যতীত এ সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না। বাংলাদেশের বেকার সমস্যার প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়ােজন
১। কৃষিক্ষেত্রে নিয়ােগবৃদ্ধি : ভূমির মালিকানার কাঠামাে পরিবর্তন করে, খাস জমির সুষ্ঠু বণ্টন করে, কৃষিতে প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়ােগ করে এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব।
২। শিক্ষক্ষেত্রে নিয়ােগ : কুটিরশিল্প এবং বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে এদেশে বেকার সমস্যার সমাধান করা যায়।
৩। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন: শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করে উৎপাদন ও বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়।
৪। নারীশিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি : নারীশিক্ষার সম্প্রসারণ ও উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারের সংখ্যা হ্রাস করা যায়।
৫। বিদেশে নিয়ােগ বৃদ্ধি : আমাদের বেকার জনশক্তির একটা অংশকে প্রশিক্ষণদান করে বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা
আরাে জোরদার করা প্রয়ােজন।
৬। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হচ্ছে না।