ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনােয়ার পাশা রচিত ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম উপন্যাস। কালজয়ী এ উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এ উপন্যাসে তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা ২৫ মার্চের গণহত্যা, লুটপাট, পৈশাচিকতা, নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা, সাহসী গণমানুষের যােদ্ধারূপ, মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরােধ, স্বাধীনতার পক্ষে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সবই উঠে এসেছে।
পাকিস্তানি সৈন্যের বর্বর রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ উপন্যাসে। ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ এ তিনটি শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক রূঢ় সত্য। পাক সেনাবাহিনী বােঝে শুধু তিনটি জিনিস। সারাদিন রাইফেল নিয়ে মানুষ মারাে। মানুষ? সে হতে পারে শিশু, যুবক, বৃদ্ধবৃদ্ধা। ক্ষুধা লাগলেই রােটি পেটে চালান করে। শুধু যুবতী অর্থাৎ আওরাত পেলেই তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর রাতভর সে আওরাত নিয়ে ফুর্তি! ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ উপন্যাসের এ নামকরণ মূলত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ স্থূল মানসিকতাকেই নির্দেশ করে।
গ্রন্থের নাম : রাইফেল রােটি আওরাত
লেখক : আনােয়ার পাশা।
প্রথম প্রকাশ : ১৯৭৩
বর্তমান প্রকাশনী : স্টুডেন্ট ওয়েজ (জুন ১৯৭৯)।
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : কাইয়ুম চৌধুরী।
গ্রন্থ সংক্ষেপ
উপন্যাসের মূল চরিত্র সুদীপ্ত শাহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। বউ আমিনাসহ তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কোয়ার্টারের ২৩ নম্বর বিল্ডিংয়ে। ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ২৩ নম্বর বিল্ডিংয়ের সকলেই মারা গেলেও বেঁচে যান তিনি এবং তার পরিবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপকেরা নিহত হন সপরিবারে। রাতের আঁধারে ইয়াহিয়া খানের লেলিয়ে দেওয়া পশুরা মেরে ফেলেছে তারই সহকর্মীদের। হত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। রেহাই পায়নি শহরের সাধারণ জনগণ। শিক্ষক হিসেবে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রদের রক্ষা করতে না পারার আক্ষেপ, সহকর্মীদের মাঝে ব্যতিক্রমী হয়ে নিজে জীবিত থাকার যে অপরাধবােধ— এসবই কুড়ে কুড়ে খায় সুদীপ্তকে।
লেখক যেন সুদীপ্ত শাহিনের মধ্য দিয়েই সে সময়ের হতাশা এবং আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। উপন্যাসের মূল সময়কাল খুব অল্প। ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে এপ্রিলের একেবারে প্রথমদিক পর্যন্ত। এই ক্ষণকালে চিত্রিত হয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার প্রতিরূপ ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট গণহত্যার চাক্ষুষ বিবরণ।
বর্ণিত হয়েছে সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত চলে আসা শােষণ এবং সেই শােষণের প্রতিবাদে বাঙালির ওপরে নেমে আসা পাকিস্তানি অপশাসন। বর্ণিত হয়েছে উনসত্তরে অধ্যাপক শামসুজ্জোহার আত্মােৎসর্গ, অতঃপর বাংলার উত্তাল অবস্থা। বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হৃদয় জাগানিয়া ৭ই মার্চের ভাষণ।
ইয়াহিয়ার বিশ্বাসঘাতকতা, আলােচনার নামে কালক্ষেপণ । অতঃপর কালরাত্রি । হাজার হাজার মানুষের লাশ। পরিশেষে, বাঙালির প্রতিশােধ নেওয়ার মানসিকতা, অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি। কথাশিল্পী আনােয়ার পাশা ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ উপন্যাসে বাঙালি জাতির এক দুর্যোগঘন ঐতিহাসিক যুগ সন্ধিক্ষণের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন।
লেখক পরিচিতি
- জন্ম : ১৫ এপ্রিল ১৯২৮, ডবকাই গ্রাম, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
- মৃত্যু : ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ (আল বদর গােষ্ঠীর একটি দল তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নিকট হত্যা করে)।
- উপন্যাস : নীড় সন্ধানী (১৯৬৮), নিশুতি রাতের গাথা (১৯৬৮)।
- গল্পগ্রন্থ : নিরুপায় হরিণী (১৯৭০)।
- কাব্যগ্রন্থ : নদী নিঃশেষিত হলে (১৯৬৩), সমুদ্র শৃঙ্খলতা উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা (১৯৭৪)।
- সম্পাদিত গ্রন্থ : সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল, প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনা, রবীন্দ্র ছােটগল্প সমীক্ষা ।
- যৌথ সম্পাদিত গ্রন্থ : মানসিংহ-ভবানন্দ উপাখ্যান, চর্যাগীতিকা, বড় চণ্ডীদাসের কাব্য,
কালকেতু উপাখ্যান, ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা সগ্রহ। - পুরস্কার : বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭১, মরণােত্তর) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২০, মরণােত্তর)।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলি
- ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ উপন্যাসের রচয়িতা- আনােয়ার পাশা [২৪তম বিসিএস)।
- ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ কোন ধরনের রচনা?- উপন্যাস। (রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী-২০১৭)
- বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর প্রথম উপন্যাসের রচয়িতা- আনােয়ার পাশা। [মাভাবিপ্রবি ‘ডি’ ইউনিট ২০১৮-১৯]
- মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি-নির্ভর প্রথম উপন্যাস- রাইফেল রােটি আওরাত। [চবি ‘ডি’ ইউনিট ২০১৭-১৮; চবি ‘D-1 & D-2′ ইউনিট ২০১৫-১৬ ]
- মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস- রাইফেল রােটি আওরাত। [শ্রিম মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক : ২০০৫]।