অভ্যাস মানুষের সব কাজের মূল। খারাপ অভ্যাসকে পরিবর্তন করে, ভালাে অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে সফল ও সার্থক করতে পারি। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায় এমন কিছু অভ্যাস নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলাে।
প্রত্যুষে ঘুম থেকে ওঠা
সকালই নির্ধারণ করে সারাদিনটি কেমন যাবে। তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠলে নির্মল পরিবেশে বেশি কাজ করার সুযােগ হয়। সকালের শুরুতেই অফিস বা ক্লাসের প্রয়ােজনীয় কাজও সহজে করে ফেলা যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। যা সারাদিন। অনেক বেশি শক্তি নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে নামাজ পড়া বা হাঁটার অভ্যাসও ব্যায়ামের উত্তম বিকল্প হতে পারে।
কাজের তালিকা করা
সারাদিনের কাজের তালিকা করুন। প্রয়ােজনে রাতে ঘুমানাের পূর্বে এ তালিকা করে রাখুন । ফলে আপনার ঘুম থেকে ওঠার প্রেরণা তৈরি হবে।
সময়ানুবর্তিতা মেনে চলা
কম সময়ে বেশি কাজ করতে হলে অবশ্যই সময় বেঁধে কাজ করতে হবে। কাজের জন্য বরাদ্দকৃত সময়েই তা শেষ করার চেষ্টা করতে হবে। আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখা যাবে না।
ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হওয়া
সফলতা শুধু সৌভাগ্য থেকেই হয় না, এতে দৃঢ় সংকল্প, ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রম প্রয়ােজন। তাই ধৈর্য ও পরিশ্রমের সাথে কাজ করলে সহজেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানাে সম্ভব।
কখনাে হাল না ছাড়া
যেকোনাে কাজের ব্যর্থতা আপনাকে শুধুই শেখাবে না, কোন বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে তাও দেখিয়ে দিবে। তাই ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে নবােদ্যমে পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা
অতিরিক্ত অর্থ মানুষকে বিপথগামী করে। সাফল্য লাভে তাই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়ােজন। সেই সাথে ভবিষ্যতের জন্যও তা সঞ্চয় করতে হবে।
কৃতজ্ঞ থাকা, সন্তুষ্ট থাকা
কৃতজ্ঞ থাকা বা সন্তুষ্ট হওয়া সুখী হওয়ার একটি মৌলিক গুণ। অন্যের ধনসম্পদ দেখে হা-হুতাশ করার কিছু নেই। বরং নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।
বাচালতা পরিহার করা
নিজেকে জ্ঞানী জাহির করতে গিয়ে বেশি কথা বলা যাবে না। এটা কখনাে সম্মান বয়ে আনে না। তাই বেশি কথা পরিহার করুন।
Mentors’ Speech
মানুষের অভ্যাস তার জীবনকে পরিচালিত করে। অভ্যাসের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলেই জীবনে সাফল্য লাভ সম্ভব। পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক চার্লস ডুহিগ তার আত্ন-উন্নয়নমূলক বেস্ট সেলিং বই ‘The Power of Habit’-এ অভ্যাসকে কাজে লাগানাের ৬টি শিক্ষা ব্যক্ত করেছেন। সেগুলাে হলাে—
- যেকোনাে নেশা বা আসক্তি পরিহার
- নিয়ন্ত্রিত ভাবে অর্থ খরচ
- সময়মতাে সকল কাজ সম্পাদন
- আলস্য পরিহার
- বদ অভ্যাস বাদ দিয়ে ভালাে অভ্যাস রপ্ত
- অভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
জানার আগ্রহকে বাড়ানো
জানার আগ্রহ মানুষকে বড় হতে সাহায্য করে। আর জানার একটি প্রধান মাধ্যম পড়া। নিজের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধি করতে তাই বই পড়াসহ জ্ঞানের সকল মাধ্যমে বিচরণ করুন।
কাজ শেষে জিনিস যথাস্থানে রাখা
কাগজপত্র, চাবি ইত্যাদি প্রয়ােজনীয় জিনিস নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। নইলে এগুলাে খুঁজতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে এবং মনােযােগে বিঘ্ন ঘটবে।
সুস্থতা লাভে স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ
যথা সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে সুস্থ থাকা জরুরি। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে বাইরের খােলা খাবার, ফাস্ট ফুডসহ সকল অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে নিরাপদ, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
নেশা বা আসক্তিকর জিনিস হতে দূরে থাকা
ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকাসক্তির মতাে অভ্যাসগুলি মানুষের কর্মস্পৃহাকে নষ্ট করে ফেলে। পরিবার তথা সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি করে। তাই যেকোনাে মূল্যে এসব থেকে দূরে থাকুন।
সঠিক সময়ে ঘুমানাে
পর্যাপ্ত ঘুম সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে। বেশি রাত না করে সঠিক সময়ে ঘুমালে সকালে ওঠা সহজ হয়। সেই সাথে ভালাে ঘুমের জন্য ঘুমের পূর্বে মােবাইল, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার ব্যবহার থেকেও বিরত থাকুন।
তাই যেকোনাে কাজের ব্যাপারে খুব যত্নশীল হওয়া উচিত, কারণ এগুলােই অভ্যাসে পরিণত হবে। আর সেই অভ্যাস অনুসরণ করুন যেগুলাে আপনাকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিবে, আপনাকে অর্থপূর্ণ ও পরিশীলিত জীবন পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।