বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা হল বিসিএস।প্রায় কমবেশি সকলেই এই পরীক্ষায় অংশ নেয় কিন্তু সঠিক ধারনা বা জ্ঞানের অভাবে অনেকেই আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেন না। আবার অনেকেই আছেন যারা নতুন পরীক্ষার্থী। কোন বিষয়ে তখনই ভাল করা সম্ভব যখন সেই বিষয়ে পূর্ণ ধারনা বা জ্ঞান থাকবে।তাই আপনাদের জন্য বিসিএস নিয়ে বেসিক কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে এলাম। আসুন এক নজরে জেনে নেই বিসিএস কি?
বিসিএস কি?
বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হল দেশব্যাপী পরিচালিত একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা যা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কর), বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (পুলিশ) সহ ২৬ পদে কর্মী নিয়োগের জন্য পরিচালিত হয়।যা পূর্বে ২৭টি ছিল, ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একত্রিত করে। বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়- প্রাথমিক পরীক্ষা (এমসিকিউ), লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ১.৫ থেকে ৪ বছর সময় লেগে যায়।
কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর চার বছরের অনার্স পাস হলেও বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা যায়। কেউ যদি তিন বছরের অনার্স বা পাস কোর্সে পড়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই মাস্টার্স পাস হতে হবে। শিক্ষা জীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণি (3rd Class) থাকলে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের অযোগ্য বলে গণ্য হয়।
প্রক্রিয়া বা ধাপ
বিসিএস পরিক্ষা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। পূর্বে প্রায় ৪ বছর ধরে এই প্রক্রিয়াগুলো চলমান থাকলেও, বর্তমানে প্রায় ১.৫ বছরের মধ্যেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।
- প্রথম ধাপ: প্রাথমিক পরীক্ষা – এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রতি বছর সাধারণত মে/জুন মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ২০০নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার এক মাস আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় এক থেকে দেড় মাস পরে ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ নম্বর ৫০%।
- দ্বিতীয় ধাপ: লিখিত পরীক্ষা – এটি বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা, সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক মাস আগে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর সাধারণত ফলাফল প্রকাশিত হয়। সর্বমোট ৯০০ নম্বরের লিখিত ও প্রফেশনাল বা টেকলিক্যাল ক্যাডারের জন্য বাড়তি ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর পেলে সাধারণত একজন প্রার্থীকে ভাইভার জন্য ডাকা হয়।
- তৃতীয় ধাপ: মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) – লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর বিবেচনায় প্রার্থীকে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের ক্রম অনুযায়ী ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষার ১.৫ থেকে ২ মাস পর বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়।
কেন বিসিএস ক্যাডার হবেন?
অনেকেই জীবনে সফল হওয়া বলতেই বোঝেন ‘বিসিএস ক্যাডার’ হওয়া। দিন দিন দেশে বিসিএস চাকরি চাহিদা মাত্রাতিক্তভাবে বেরেই চলেছে।আমরা কমবেশি সবাই পাওয়ার প্র্যাকটিস করতে চাই, বস হতে চাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএসই একমাত্র চাকরি যেখানে বিশেষ মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি পাওয়া যায়। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিন দিন এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তরুণ প্রজন্ম বিসিএসের দিকে ঝুঁকছেন। আর এ চাহিদাই বিসিএসকে ‘সোনার হরিণে’ পরিণত করছে। বিসিএসের চাকরির মাধ্যেমে সরাসরি দেশসেবায় অংশগ্রহণ করা যায়। পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের মতে, আপনি মেধাবী হলে, দেশের স্বার্থে সরাসরি কাজ করার ইচ্ছে আপনার থাকলে অব্যশই বিসিএস বেছে নিতে পারেন। এই চাকরিতে তরুণরা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান।
একজন বিসিএস ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা
১) চাকরির স্থায়ী নিশ্চয়তা আছে। খুব বড় কোন অঘটন না ঘটালে চাকরি যাবেনা। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে বদলি, বেশি হলে ডিমোশন হয়।
২) চাকরির শুরুতেই ভালো বেতন। একজন ক্যাডারের বেতন শুরু হয় জাতীয় ৯ম গ্রেড বেতন স্কেলে। বেসিক ২২০০০ থেকে শুরু।চাকরির একেবারে প্রথমেই ১১০০ টাকার একটা ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়। আবার যারা টেকনিক্যাল ক্যাডার (ডাক্তার, শিক্ষাইত্যাদি) তারা অতিরিক্ত আরো একটি ইনক্রিমেন্ট পান।
৩) বাচ্চাদের জন্য মাসিক শিক্ষা ভাতা দেয় সরকার। একজন শিশুর জন্য মাসিক ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকে।
৪) বাসস্থান, যোগাযোগ মাধ্যম, টিফিন ভাতা সহ নানা ধরনের ভাতা দেয়া হয়।
৫) যেকোন ক্যাডারের মান সম্মান সমাজের অন্যান্য যেকোন চাকুরিজীবীদের চাইতে বেশি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় যেকোন অনুষ্ঠানে আলাদা মর্যাদা থাকে।
৬) ৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি নেয়ার সুযোগ থাকে ক্ষেত্র বিশেষে।
৭) চাকরি শেষে বিশাল মূল্যের পেনশন পাওয়া যায়। পেনশনের টাকা দিয়ে বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যায়।
৮) সর্বোপরি সমাজ, দেশের জন্য সামনে থেকে কাজ করার সুযোগ থাকে।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য কখন থেকে পড়া শুরু করবেন?
আপনার যদি ইচ্ছা থাকে বিসিএস এ যোগ দেবার, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পড়া শুরু করা উচিত। শুধুমাত্র বিসিএসকে টার্গেট রেখে সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশুনা করতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন অবস্থায় তথ্যাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে দেখে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করা উচিত।
বিসিএস প্রস্তুতির জন্য দিনে কত ঘন্টা পড়বেন?
কে কত সময় পড়বেন তা নির্ভর করবে কে কোন বিষয়ে পড়ছেন তার উপর। যদি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট এ সময় বেশি দিতে হয় তাহলে কম সময় পড়বেন। কোন ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা কম করে বিসিএস এর পড়াশুনা করা যাবে না। মনে রাখবেন আপনি যতটুকু পড়া মাথায় ধারন করতে পারবেন তত ঘণ্টা পরবেন।
বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করা
বিসিএস এর ইতিহাসে প্রতিবারই পূর্বের প্রশ্ন থেকে কিছু রিপিট হয়। তাছাড়া পূর্বের প্রশ্নগুলো সলভ করলে বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে বাস্তবিক জানা যাবে। বাজারে প্রচলিত অনেক বই ই আছে। যেকোন একটা কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বা ২য় বর্ষেই ফাঁকে ফাঁকে পড়ে ফেলা উচিত।প্রস্তুতির পূর্বেই বিসিএস এর সিলেবাস প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া জরুরী। সিলেবাসের বাইরে সাধারনত কোন প্রশ্ন আসে না। সিলেবাস দেখে কোন বিষয়ে পারদর্শী আর কোন বিষয়ে দূর্বলতা বুঝা উচিত। ধরেন আপনি সিএসইতে পড়াশুনা করছেন। তাহলে আপনার জন্য কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় অনেক সহজ। সুতরাংএই বিষয়ে অন্যদের থেকে আপনার কম পড়া লাগবে। এই সময়ে আপনি অন্য বিষয় পড়তে পারবেন।
আমার রেজাল্ট ভালো না আমি কি বিসিএসে টিকতে পারব?
বিসিএস পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো থাকলে আপনিও বিসিএসে টিকতে পারবেন।তবে অবশ্যই নিজের উপর আত্মনির্ভরশীল থাকতে হবে এবং পরিশ্রমী হতে হবে। সুসান্ত পাল যদি কম জিপিএ নিয়ে বিসিএসে প্রথম হতে পারেন তবে আপনি কেন নয়? নিজের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠুন আপনিও সব পারবেন।
বিসিএস কঠিন পরিক্ষা হলেও অসম্ভব কিছু নয়। নিয়মিত পড়াশুনা , নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর লক্ষস্থিরের মাধ্যমে খুব সহজেই কঠিনকেও সহজ করা যায়। আপনার লক্ষ্য যদি বিসিএস হয় তবে আজকে থেকেই লেগে পড়ুন।