ব্যাপন (Diffusion)

Preparation BD
By -
0

কোনাে মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফুর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় পদার্থ উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানের দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন: ঘরের এক কোণে কোনাে একটি সুগন্ধির শিশির মুখ খুলে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণ। কোনাে পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে সময় কম লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার বেশি এবং কোনাে পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার কম। নিচের পরীক্ষাগুলাের মাধ্যমে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা নিতে পারবে।
একক কাজ

পরীক্ষা নং: 1

কক্ষ তাপমাত্রায় একটি কাচের পাত্রে কিছু বিশুদ্ধ পানি নাও। এ পানিতে সামান্য গােলাপি বর্ণের কঠিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO) ছেড়ে দাও। কী লক্ষ করলে? কিছুক্ষণ পর দেখবে KMnO, দানাগুলাে দ্রবীভূত হয়ে গােলাপি দ্রবণে পরিণত হচ্ছে।

এক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের কণাগুলাে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে গতিশক্তি অর্জন করে এবং পানির মাঝে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বেশ কিছু সময় পর পুরাে পাত্রেই গােলাপি রং ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে পানিতে তথা তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থ (KMnO) ব্যাপিত হয়েছে। তরলে কঠিন পদার্থের ব্যাপনের হার অনেক কম হয়।

এক্ষেত্রে তাপ প্রদান করলে ব্যাপন হার বেশি হয়। একইভাবে যদি গরম পানিতে KMnO এর ব্যাপনের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করি তবে দেখা যাবে ঠাণ্ডা পানির চেয়ে গরম পানিতে KMnO, কণাগুলাে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র পানিকে গােলাপি বর্ণে পরিণত করছে। কারণ গরম পানি থেকে KMnO, কণাগুলাে তাপ গ্রহণ করে অধিক গতিশক্তি প্রাপ্ত হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ তাপ – প্রয়ােগ করলে কঠিন পদার্থের ব্যাপন হার বৃদ্ধি পায়। চিত্র 2.02: পানিতে KMnO, এর ব্যাপন।

পরীক্ষা নং: 2

কক্ষ তাপমাত্রায় একটি বিকারে কিছু পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি নিয়ে এতে সামান্য পরিমাণ তরল নীলের দ্রবণ যােগ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবে বিকারের সমস্ত পানির রং নীল হয়ে গেছে। অর্থাৎ নীলের দ্রবণের কণাগুলাে সমস্ত পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে পানিতে তরল পদার্থ নীলের দ্রবণ) ব্যাপিত হয়েছে।

কক্ষ তাপমাত্রায় কঠিন KMnO এর ব্যাপনের চেয়ে তরল নীলের দ্রবণের ব্যাপনের সময় অনেক কম লেগেছে। অর্থাৎ তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থের ব্যাপন হার-এর চেয়ে তরল মাধ্যমে তরল পদার্থের ব্যাপন হার বেশি। তাপের প্রভাবে এই ব্যাপন হার আরও বেশি হয়। কক্ষ তাপমাত্রায় বা গরম অবস্থায় তরল মাধ্যমে গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন হার সবচেয়ে বেশি হয়।

পরীক্ষা নং: 3

দুটি গ্যাসের ব্যাপন

দুই মুখ খােলা একটি লম্বা কাচনল নাও। দুই খণ্ড তুলা নাও। এক খণ্ড তুলাকে ঘন হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) দ্রবণে ভিজাও এবং অপর খণ্ড তুলা অ্যামােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH,OH) দ্রবণে ভিজাও। এবার ঐ লম্বা কাচনলটির এক মুখে হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণে সিক্ত তুলা এবং অপর মুখে অ্যামােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণে সিক্ত তুলা দিয়ে বন্ধ করাে। এখানে হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণ থেকে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস এবং অ্যামােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণ থেকে অ্যামােনিয়া (NH) গ্যাস ব্যাপিত হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখতে পাবে কাচনলের ভিতরে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস ও অ্যামােনিয়া গ্যাস পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডের (NHcl) সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করেছে। সাদা ধোঁয়ার অবস্থান কাচনলের ঠিক মাঝামাঝি হবে না। এটি হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণের কাছে এবং অ্যামােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণ থেকে দূরে অবস্থান করবে। অর্থাৎ একই সময়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস কম দূরত্ব এবং অ্যামােনিয়া গ্যাস বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এ পরীক্ষা থেকে বােঝা যায় যে, অ্যামােনিয়া গ্যাস হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করছে অর্থাৎ অ্যামােনিয়া গ্যাসের ব্যাপন হার হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ব্যাপন হারের চেয়ে বেশি। এর কারণ মূলত এদের আণবিক ভর। যে গ্যাসের আণবিক ভর যত কম তার ব্যাপন হার তত বেশি।

এখানে অ্যামােনিয়া গ্যাসের আণবিক ভর হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের আণবিক ভরের চেয়ে কম। তাই NH, গ্যাস HCl গ্যাসের চেয়ে বেশি। দূরত্ব অতিক্রম করেছে। (NH, গ্যাসের আণবিক ভর 17 এবং HCl গ্যাসের আণবিক ভর 36.5) H2, He, N2, ০2, এবং co2, গ্যাসগুলাের আণবিক ভর যথাক্রমে 2, 4, 28, 32 এবং 44া এই গ্যাসগুলাের মধ্যে H, এর আণবিক ভর কম। তাই H, এর ব্যাপন হার বেশি হবে এবং c0, এর আণবিক ভর বেশি, কাজেই co, এর ব্যাপন হার কম হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !