১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানে পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা ছিল। তবে কার্যত গভর্নর জেনারেল এবং আমলারাই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অথবা বিধানসভার মতামতের তােয়াক্কা করে গভর্নর জেনারেল নিজের পছন্দ অনুযায়ী মন্ত্রিসভা গঠন করতেন।
মন্ত্রিসভা তাদের কার্যাবলির জন্য শুধু গভর্নর জেনারেলের নিকট দায়ী থাকতেন। পাকিস্তান নামেমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ছিল; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি আমলান্ত্র। বিধানসভা ও মন্ত্রিপরিষদ আমলাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তানের প্রথম মুখ্য সেক্রেটারি আজিজ আহমদ ছিলেন পাকিস্তানের প্রকৃত শাসক।
১৯৫৫ সালের এক হিসেব থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে ১৯ জন সচিবের মধ্যে সবাই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। গণপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। খাজা নাজিমউদ্দীন ও তাঁর সহকর্মীগণ পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের জন্য ছয়টি আসন ছেড়ে দিলে পূর্ব পাকিস্তান তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল জিন্নাহর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন।
রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বাস্তবায়নে পশ্চিম পাকিস্তানিদের একাধিপত্য ছিল। গণপরিষদের ৭৯ জন সদস্য তাঁদের নিজেদের মধ্য হতে গভর্নর জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতেন। ১৯৪৮ সালে খাজা নাজিমউদ্দীনের পর নূরুল আমীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল দশ জন। একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে পাকিস্তানের লেগেছিল নয় বছর।
১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ গৃহীত সংবিধানে বাঙালিদের আশা-আকাঙক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অধিকার দেওয়া হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র নিজেদের আধিপত্য রক্ষার জন্য ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। কিন্তু আইয়ুব খান শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। ফলে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে।
ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনিও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। বরং তার গৃহীত পদক্ষেপসমূহে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যায়।