যদি মূল ভূখণ্ড থেকে প্রবালে তৈরি ভূভাগ অনেক দূরে সমুদ্রের মধ্যে হয়, তবে সে ভূভাগকে প্রবাল দ্বীপ বলে। সাধারণত প্রবাল দ্বীপ কয়েক কিমি. দীর্ঘ ও প্রশস্ত হয়। তবে সাগর পৃষ্ঠ থেকে প্রবাল দ্বীপের ভূমিপৃষ্ঠ তেমন উঁচু হয় না। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। এটি দেশের সর্বদক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থিত। এর আয়তন ৮ বর্গ কি. মি.।
বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে প্রবাল দ্বীপের গুরুত্ব :
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১৮২টি বন্যজীব প্রজাতির অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪টি প্রজাতি উভচর গােত্রের, ২৮টি সরীসৃপ, ১৩০ টি পাখি ও স্তন্যপায়ী। পুরাে দ্বীপজুড়ে ভাটার পানিস্তরের অত্যন্ত কাছাকাছি ক্ষুদ্র খাড়িসমূহে বিভিন্ন ধরনের ছােট ছােট প্রবালগােষ্ঠী দেখা যায় । দ্বীপের চারপাশে অগভীর সমুদ্রেও এদের দেখা যায়।
সাগরের সুনীল জলরাশি আর নারকেল গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর, অসংখ্য নারকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এ দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন এক বৈশিষ্ট্য। পুরাে দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে নারকেল বাগান এটি। এ দ্বীপের নৈসর্গিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
প্রতিবছর দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সেন্ট মার্টিনে ছুটে আসে আর উপভােগ করে প্রবাল দ্বীপের অপরূপ ও মনােমুগ্ধকর দৃশ্য। সেন্ট মার্টিন বা প্রবাল দ্বীপ বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে এর অবস্থান সু- সংহত ও সুদৃঢ় করে নিয়েছে। এখানকার মনােমুগ্ধকর সারি সারি প্রবাল আর চারদিকে জলরাশির মাঝে এক চিলতে বালুরাশির উপর সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে সীমাহীন আনন্দের দোলা দেয়। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
দেশের অন্যতম আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অর্থনীতিতে এ দ্বীপের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিবছর শীত মৌসুমে দিনে তিন থেকে চার হাজার পর্যটক এ দ্বীপে আসে। বাংলাদেশের পর্যটন আয়ের প্রধান হাতিয়ার প্রবাল দ্বীপ। পাশাপাশি এ দ্বীপের নারকেল গাছ, বিভিন্ন প্রাণী, সামুদ্রিক জলজ প্রাণী এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ দ্বীপে প্রচুর চুনাপাথর ও নুড়িপাথর রয়েছে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দ্বীপের প্রবাল সমুদ্রের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ প্রাণীর বসতি ও খাবার জোগায়। প্রবাল মূলত ‘মুপলিপস’ অণুজীব। দেখতে চুনাপাথরের মতাে। এ প্রবাল জমে প্রাচীর গড়ে তােলে। আশ্রয় দেয় সাগরতলের নানা উদ্ভিদ ও শৈবালকে, অভয়ারণ্য হয়ে থাকে মাছসহ সব প্রাণীর। এরা সমুদ্রে অক্সিজেনও জোগায়।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র্য, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র, প্রবালের সমৃদ্ধি, সমুদ্রের অক্সিজেন সরবরাহ, মাছের অভয়ারণ্য, প্রাকৃতিক নৈসর্গের লীলাভূমি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদানসহ নানা কারণে সেন্ট মার্টিন তথা প্রবাল দ্বীপের গুরুত্ব বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে অনস্বীকার্য।