রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

Preparation BD
By -
0

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানামুখী নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, অর্থনীতিতে এর প্রভাব যতটা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা পড়েনি।

নিষেধাজ্ঞার বহর

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাশিয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলাে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরােপ করতে থাকে। বর্তমানে রাশিয়ার ওপর ৮ হাজার ২২৫টি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি, ঋণ প্রদান, লেনদেনব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেওয়াসহ নানা নিষেধাজ্ঞা ঝুলছে দেশটির ওপর বৈশ্বিক নিরাপত্তাঝুঁকি ও নিগ্ধোজ্ঞা নিয়ে কাজ করা কাষ্টেলামের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ২হাজার ২৬টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রুবলের উল্লম্ফন

নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে দেশটির মুদ্রা রুবল দুর্বল হওয়ার বদলে শক্তিশালী হয়েছে। জানুয়ারির পর থেকে মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুবল ৪০ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, রাশিয়া থেকে আমদানি পণ্যের মূল্য রুবলে পরিশােধের বাধ্যবাধকতা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

জুনের হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যুদ্ধ ও নিৰ্ধোজ্ঞার কারণে যতটা মূল্যস্ফীতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে তা আরও কম হবে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ১৮ থেকে ২৩ শতাংশের বদলে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে পরিবর্তন

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাশিয়ায় এপ্রিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ শতাংশ। মে মাসে দেশটির সরকার থেকে জানানাে হয়েছিল, চলতি বছর জিডিপি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনষ্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের পূর্বাভাস, বিদেশি বিনিয়ােগ ও শিল্পোৎপাদন কমায় জিডিপি কমবে ১৫ শতাংশ।

আমদানি কমেছে অনেক

যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় বিনিয়ােগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও শিল্পোৎপাদন কমায় রাশিয়ার আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে। রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক ওটক্রিতির তথ্য দিয়ে দ্য মস্কো টাইমস জানিয়েছে, এপ্রিলে ৫০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ মাসের আমদানি, রপ্তানিবিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

চাঙা জ্বালানি রপ্তানি

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্বালানি রপ্তানি থেকে এখনাে দৈনিক ১০০ কোটি ডলার আয় করে চলেছে রাশিয়া। হেলসিংকিভিত্তিক দ্য সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিয়ার এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন হামলার পর প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে মস্কো। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় ১২ শতাংশ বেড়েছে।

গাড়ি বিক্রিতে ধাক্কা

অ্যাসােসিয়েশন অব ইউরােপিয়ান বিজনেসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাহিদা কমে যাওয়া এবং কাঁচামালের সংকটের কারণে মে মাসে রাশিয়ার গাড়ি বিক্রি রেকর্ড ৮৩ শতাংশ কমেছে। রুশ পরিসংখ্যান দপ্তর রসস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, গাড়ির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। গাড়িশিল্পের ক্ষতি কাটাতে প্রণােদনার উদ্যোগ নিতে ১৬ জুন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রকৃত পরিস্থিতি কী, সেটি এখনাে পরিষ্কার নয়। দীর্ঘ মেয়াদে দেশটির অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !