১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ফ্রান্সের দৈনিক পত্রিকা লা ফিগারাের ১ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, শেখ মুজিব কারাগারে আছেন এবং জীবিত আছেন। তবে তিনি কোন কারাগারে আছেন, তা তিনি জানেন না।
২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ২ সেপ্টেম্বর মুজিবনগরে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া সব শরণার্থীকে সসম্মানে নিজ নিজ বাস্তুভিটায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ করার জন্য যশােরের শার্শা-গােয়ালহাটিতে ৫ সেপ্টেম্বর নিয়ােজিত ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের একটি প্যাট্রল দল। দলের অধিনায়ক ছিলেন ইপিআরের সাবেক সদস্য নূর মােহাম্মদ শেখ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই দলের অবস্থান টের পেয়ে যায়। তারা দ্রুত তিন দিক থেকে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। নূর মােহাম্মদ সহযােদ্ধাদের কাভার করার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের হাতে। একাই লড়াই করতে করতে নূর মােহাম্মদ শেখ শহীদ হন। স্বাধীনতার পর নূর মােহাম্মদ শেখকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়।
৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
যুক্তরাজ্য ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এই দিন নরওয়ে থেকে সুইডেনের রাজধানী স্টকহােমে যান। স্টকহােমে আবু সাঈদ চৌধুরী নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গুনার মিরডালের সঙ্গে দেখা করেন। আবু সাঈদ চৌধুরী তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে স্থানীয় বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির চেয়ারম্যান পদ গ্রহণের অনুরােধ করলে মিরডাল রাজি হন।
৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং ভারতে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেথ ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে, এ ব্যাপারে তাঁর কোনাে সন্দেহ নেই।
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৫০০ শিক্ষাবিদ, সংসদ সদস্য, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও ধর্মীয় নেতা ১১ সেপ্টেম্বর এক আবেদনে দেশটির সরকারকে অবিলম্বে পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ করার অনুরােধ জানান। একই সঙ্গে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের শরণার্থীদের অর্থ সাহায্য বাড়িয়ে ৫০ লাখ ডলার করার অনুরােধ করেন তারা।
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
চাকরিসূত্রে বিদেশে কর্মরত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাঙালি কূটনীতিকদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ১৫ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশ জারি করে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে নির্দেশে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে আনুগত্য প্রকাশ না করলে তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করা হবে।
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
এই দিনে বিশ্বখ্যাত ফরাসি লেখক ও ভাবুক অঁদ্রে মালরাে প্যারিসে এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে গিয়ে তিনি বাঙালি মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যােগ দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছেন। তার এই বিবৃতি বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।
১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সম্পর্কে তিন ৪ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তােলার প্রস্তাব করা হয়। নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বি পি কৈরালা এবং ভারতীয় লােকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ এ প্রস্তাব করেন।
২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জাদুকর পি সি সরকার (জুনিয়র) পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযােগিতা স্বরূপ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। উত্তর ভারতের জাদু প্রদর্শনী থেকে এ অর্থ তিনি আয় করেন।
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ২৫ সেপ্টেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতারে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীকে নৌ ও বিমান দিয়ে সাজানাে হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে এ ভাষণে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরে মুক্তিবাহিনীর নৌ শাখা ইতিমধ্যে বেশ কটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে।
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলাের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, তারা যেন নিয়মকানুনের খুঁটিনাটিতে আটকে না থেকে সত্য, ন্যায় ও মানবতার স্বার্থে বাংলাদেশ নামে বাস্তবতার দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকে স্বীকৃতি দেয়। নিউইয়র্কে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকগােষ্ঠীর বর্বরতার প্রতিবাদে ঢাকার বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক টাইগারম্যান এদিন পদত্যাগ করেন। তিনি কলকাতায় এ কথা ঘােষণা করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সােভিয়েত ইউনিয়নের শান্তি কমিটি ৩০ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অপরাপর নেতার প্রতি উৎপীড়ন বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কমিটি সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে পূর্ব বাংলার জনগণের ইচ্ছা, অধিকার ও স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।