বিশ্বের প্রায় সব দেশে বিভিন্ন ধরনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। এর বাইরেও দেশে দেশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রী। সম্প্রতি পাপুয়া নিউগিনির সরকার দেশের কফিকে জনপ্রিয় করে তুলতে একজন কফি মন্ত্রী নিয়ােগ দেয়। এ প্রেক্ষিতে আমাদের এ আয়ােজন—
বিশ্বের প্রথম কফিমন্ত্রী |
কফি ও পাম তেল পাপুয়া নিউগিনির দুটি শীর্ষ রপ্তানি পণ্য। ২০০৮ সাল থেকে পাপুয়া নিউগিনির প্রধান কৃষি রপ্তানির শীর্ষে রয়েছে পাম তেল। এ পণ্য থেকে ২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় করে দেশটি। দেশটির কৃষি রপ্তানি পণ্যের দ্বিতীয় অবস্থানে কফি। এ পণ্য থেকে ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত GDP’র ৬% জোগান আসে। ২৩ আগস্ট ২০২২ পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপ্পে তার মন্ত্রিসভায় নতুন দুটি পদ সৃষ্টি করেন। এর একটি হচ্ছে, কফিমন্ত্রী ও অন্যটি পাম তেলবিষয়ক মন্ত্রী। এর মধ্যে কফিমন্ত্রী হিসেবে নিয়ােগ পান দেশটির কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক উপমন্ত্রী জো কুলি। বিশ্বে শুধু কফির বিষয়টি দেখতে মন্ত্রী পদে নিয়ােগের ঘটনা এটিই প্রথম। এই মন্ত্রীর কাজ হবে কফিবিষয়ক নানা কিছু দেখভাল ব্রা। দেশটির সরকারপ্রধান বলেছেন, চলতে-ফিরতে, ঘুমানাে, আড্ডা সবখানে কফি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে এ মন্ত্রীকে। |
জাতীয় সুখ কমিশন, ভুটান
বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ভুটানের রাজার উপাধি ‘ড্রাগন রাজা’। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও ভূপ্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। জনগণের সুখের কথা মাথায় রেখে প্রায় ৪৪ বছর আগেই জাতীয় সুখ কমিশন গঠন করেছিল ভুটান। বিশ্বে ভুটানই প্রথম দেশ যারা জাতীয় সুখ সূচক চালু করে । ১৮ জুলাই ২০০৮ থেকে দেশটি জাতীয় প্রবৃদ্ধি যাচাইয়ে মােট জাতীয় সুখকে অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচনা করছে। টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক সুরক্ষা ও সুশাসনের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন করা হয়।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন
- বিভিন্ন পরীক্ষাতে এশিয়া মহাদেশ থেকে যত প্রশ্ন এসেছে
- সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (CEPA)’র সাতকাহন
- বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযােগী
- নোবেল পুরস্কার ২০২২ বিজয়ীদের তালিকা
- মিখাইল গর্বাচেভের উত্থান-পতন
- যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস
- রানি এলিজাবেথের প্রয়াণ রাজা হচ্ছেন চার্লস
- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
- আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ
প্রচার ও বিক্ষোভ বিভাগ, উত্তর কোরিয়া
যাচ্ছেতাই দাবি প্রতিষ্ঠা করতেই ১৯৪৫ সালে প্রচার ও বিক্ষোভ (Propaganda and Agitation Department –PAD) নামে রাষ্ট্রীয় বিভাগের জন্ম। দেশটির সাবেক নেতা কিম জং ইল বার্গার আবিষ্কার করেন এবং তিনি গলফ খেলার অভিষেকেই ১১ পয়েন্ট অর্জন করেন বলে গুজব ছড়ায় এ বিভাগ। আরও দাবি করা হয় যে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন মাত্র তিন বছর বয়সে গাড়ি চালানাে শিখেছেন। এসব গুজব প্রচারণার লক্ষ্যেই এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিভাগ। অন্যসব দেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে এ প্রতিষ্ঠানটি। কিম ২৮ নভেম্বর ২০১৪ তার বােনকে এ বিভাগের দায়িত্ব দেন।
সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রণালয়, আমিরাত
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংযুক্ত আরব আমিরাত সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রণালয় (Ministry of Tolerance and Coexistence) সৃষ্টি করে। অভিনব এ মন্ত্রণালয়ের জন্য মন্ত্রীও রয়েছেন। ২০১৯ সালে আমিরাত অসম্ভব একটি মন্ত্রণালয় তৈরি করে। এ মন্ত্রণালয়টি অসম্ভব চ্যালেঞ্জগুলাে কার্যকরভাবে মােকাবিলা করতে এবং ভবিষ্যতের প্রস্তাবগুলাের জন্য পরিকল্পনা করে। এ মন্ত্রণালয়ের কোনাে মন্ত্রী নেই। তবে বেশ কয়েকজন সদস্য দ্বারা পরিচালিত হয়।
যােগ মন্ত্রণালয়, ভারত
যােগ ব্যায়াম ভারতে ঐতিহ্যবাহী এক প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পদ্ধতি। ৯ নভেম্বর ২০১৪ যােগ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় নরেন্দ্র মােদি ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যােগ দিবস বলে ঘােষণা করার প্রস্তাব দেন। একই সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যােগ দিবস হিসেবে ঘােষণা করে। ২০১৫ সালের জুনে যােগ দিবসে তিনি আয়ােজন করেছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম যােগ ব্যায়ামের আসর।
একাকিত্ব মন্ত্রণালয়, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের জো কক্স কমিশন অন লােনলিনেস-এর ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে জানায়, দেশটিতে ৯০ লাখের বেশি মানুষ হয় সব সময়, নতুবা প্রায়ই নিঃসঙ্গতাবােধ করে। যুক্তরাজ্য সরকারের গবেষণা বলছে, দেশটিতে প্রায় দুই লাখ প্রাপ্তবয়স্ক আছেন, যাদের বন্ধু বা স্বজনের সঙ্গে এক মাসের বেশি সময় কথা হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ যুক্তরাজ্য একাকিত্ব মন্ত্রণালয় নামে অদ্ভুত মন্ত্রণালয় চালু করে। সাবেক যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের আমলে শুরু হয় এ মন্ত্রণালয়ের পথ চলা।
রাষ্ট্রীয় আইন ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার পরিষদ, মিয়ানমার
১৯৬২ সাল থেকে নানা চড়াই-উতরাই পার করে আসছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। এ দেশে সামরিক জান্তাদের কড়া শাসন আড়াল করতে রাষ্ট্রীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার পরিষদ (State Peace and Development Council) নামে একটি বিভাগ খােলা হয়। এর সামগ্রিক পরিচালনায় ছিলেন মাত্র ১১ জন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। ছদ্ধবেশী এ নামের বদৌলতে নাগরিকদের মন ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণই মূল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তা সফল না হওয়ায় ১৯৯৭ সালে নামটি পন্টে রাষ্ট্রীয় শান্তি ও উন্নয়ন পরিষদ (State Law and Order Restoration Council) দেওয়া হয়। ৩০ মার্চ ২০১১ পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়।