বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযােগী

Preparation BD
By -
0

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযােগী। প্রতিষ্ঠানটির সহায়তার ধরন মূলত, সহজ শর্তে ঋণ এবং অনুদান। এটি ঋণ, নীতি পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার পরিষেবা প্রদান করে।

বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা, যা বিভিন্ন দেশকে উন্নয়ন কর্মকাত্রে জন্য ঋণ, অনুদান ও পরামর্শ প্রদান করে। ১-২২ জুলাই ১৯৪৪ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডসের মাউন্ট ওয়াশিংটন হােটেলে অনুষ্ঠিত ৪৫টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গৃহীত চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। এ চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪৫। সংস্থাটির সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসি।

১৯৪৭ সালে প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্স বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে। তখনই বিশ্বব্যাংক শর্ত দেয় ঋণ পরিশােধকালে দেশটি অন্য যেকোনাে ঋণদাতার চেয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশােধে অগ্রাধিকার দেবে। বাজেটে ব্যাপক কাটছাট করতে হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ৫টি অঙ্গসংস্থা হলাে— IBRD, IDA, IFC, ICSID ও MIGAT.

পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক (IBRD) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি অঙ্গ সংস্থা, যা মধ্যম আয়ের এবং ঋণযােগ্য নিম্ন-আয়ের দেশগুলির সরকারকে ঋণ দেয়। যার প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ। IBRD-তে যােগদানের জন্য, দেশগুলিকে প্রথমে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) সদস্য হতে হবে। বাংলাদেশ IBRD থেকে কোনাে ঋণ নেয় নাই।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতি (IDA) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি অঙ্গ সংস্থা, যা উন্নয়নশীল দেশসমূহ যাদের মাথাপিছু আয় ১,০৬৫ ডলারের নিচে, যেখানে লােকেরা দিনে দুই ডলারের কম আয় করে সেই দেশগুলিতে ঋণ প্রদান করে। IDA’র ঋণে শুধু ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরের পরিকৃতা দেওয়া হয়। IDA’র ঋণে কোনাে সুদ নেই, তবে এটি বিতরণ করা এবং বকেয়া ঋণের উপর ০.৭৫% বার্ষিক পরিষেবা চার্জ দিতে হয়। IDA ঋণের এবং অনুদানের প্রতিশ্রুতি চার্জ বার্ষিক ০%-০.৫%। তাই IDA-কে Soft loan window বলা হয়। কারণ IDA সহজ শর্তে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়। IDA’র সদস্যপদ IBRD-এর সকল সদস্যের জন্য উন্মুক্ত।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন

আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়ােগ সংস্থা (IFC) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি অঙ্গ সংস্থা, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে ব্যক্তিগত ও বেসরকারি খাতে ঋণ, ইকুইটি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে। IFC সাধারণত ৭-১২ বছর মেয়াদে ব্যবসা। এবং ব্যক্তিগত প্রকল্পে ঋণ দেয়। IBRD’র সদস্যপদ IFC’তে সদস্য হওয়ার পূর্বশর্ত।

পুঁজি বিনিয়ােগ জনিত বিরােধ নিষ্পত্তি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র (ICSID) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি সালিশি প্রতিষ্ঠান। ICSID সরকার এবং বিদেশি বিনিয়ােগকারীদের মধ্যে বিনিয়ােগ বিরােধের সমঝােতা এবং সালিশের সুবিধা প্রদান করে।

বহুপাক্ষিক বিনিয়ােগ গ্যারান্টি এজেন্সি (MIGA) বিশ্বব্যাংকগ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, যা রাজনৈতিক ঝুঁকি বীমা এবং ঋণ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা প্রদান করে। বিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার জন্য Foreign Direct Investment (FDI) এ উৎসাহ প্রদানের জন্য MIGA বিনিয়ােগকারীদের ঋণ দেওয়ার গ্যারান্টি প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ঋণপ্রবাহ

  • ১৯৭১-৭২ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশকে সব উন্নয়ন সহযােগী সংস্থা ও দেশ খাদ্য, পণ্য এবং প্রকল্প সহায়তাসহ মােট ১৬,১২৮ কোটি ডলার বা ১৬১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মধ্যে জুন ২০২২ পর্যন্ত মােট ১০,১৩৬ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেছে। ছাড় করা অর্থের মধ্যে ৩৬% বিশ্বব্যাংকের। নভেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংক প্রথম ৫ মিলিয়ন ইমার্জেন্সি রিকভারি ক্রেডিট দেয়।
  • জুন ১৯৭২-২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ২৮,৮৬৯ (বি.মা.ড) ঋণ প্রদান করেছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে ৫৫টি প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ১,৫৬৯ কোটি ডলার দিবে বিশ্বব্যাংক।
  • ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক তৃতীয় সর্বোচ্চ উন্নয়ন সহযােগী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য প্রায় ১৬৭ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ছাড় করেছে। বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্বব্যাংক সিস্টেমেটিক কান্ট্রি ডায়গনস্টিক (SCD) ফান্ড গঠন করে।
  • ১৬ জুলাই ২০২২ Resilient Infrastructure for Adaptation and Vulnerability Reduction (RIVER) এর অধীনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের | অনুদান ও ঋণদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা সুদমুক্ত ঋণ।।
  • ৭ আগস্ট ২০২২ কোভিড রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ৩০০ (মি.মা.ড.) অর্থায়নের চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ SDR মুদ্রায় এ ঋণ গ্রহণ করবে। বার্ষিক ০.৭৫ % সার্ভিস চার্জ এবং ১.২০% হারে সুদ দিতে হবে।
  • ২২ আগস্ট ২০২২ বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১,৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। অন্যদিকে, IDA স্বাধীনতার পর থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত তিনটি খাতে সর্বমােট ২৪,৯৭১ (মি.মা.ড.) ঋণ দেয়। খাত তিনটি হলাে- খাদ্য সাহায্য, পণ্য সহায়তা ও বিভিন্ন প্রকল্প। IFC আগামী পাঁচবছরে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার দিবে। MIGA বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বছরে ৬৯৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ গ্যারান্টি দিচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !