ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির আমন্ত্রণে ৫-৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সাতটি সমঝােতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝােতা স্মারক
- কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশের ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সমঝােতা
- বৈজ্ঞানিক সহযােগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (CSIR) সঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (BCSIR) সমঝােতা
- বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও ভারতের ভূপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝােতা
- ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলােতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য সমঝােতা
- বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযােগিতা
- ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম প্রসার ভারতী’র সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমঝােতা
- মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযােগিতাবিষয়ক সমঝােতা স্মারক।
প্রকল্প উদ্বোধন
৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মােদি যৌথভাবে ৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন করা ৫টি প্রকল্প হলাে—
- মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের (রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প) ইউনিট-১
- খুলনার রূপসা রেল সেতু
- বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণ, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ
- খুলনা দর্শনা রেললাইন সংযােগ প্রকল্প
- পার্বতীপুর-কাউনিয়া মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজ লাইনে রূপান্তর প্রকল্প।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন :
- মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২
- চীন-তাইওয়ান সংকট
- বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর
- বিশ্বে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন নারীরা
- আফ্রিকার তিন দেশ থেকে গ্যাস কিনতে : সমঝােতা সই ইউরােপের
যৌথ বিবৃতি
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ নয়াদিল্লির তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ৩৩ অনুচ্ছেদের বিবৃতিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহযােগিতা, দ্বিপক্ষীয় সহযােগিতার বিষয় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনা মাশুলে ভারতে ট্রানজিট ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার প্রস্তাব পায়।
মুজিব বৃত্তি
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও আহত ভারতীয় সেনাদের বংশধরদের বৃত্তি প্রদান করেন। বঙ্গন্ধুর নামে নামকরণ করা হয় মুজিব বৃত্তি’ । শুরুতে এ কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ১০০ এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১০০ করে মােট ২০০ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যথাক্রমে এককালীন ৫০০ এবং ১ হাজার মার্কিন ডলার করে দেওয়া হয়।
রূপসা রেলসেতু
২১ ডিসেম্বর ২০১০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মােংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমােদন করে। খুলনা-মােংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর উপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। সংযােগ রেললাইনসহ এই সেতুর মােট দৈর্ঘ্য ৫.১৩ কিলােমিটার হলেও মূল রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ৭১৬ মিটার।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের ইউনিট-১ এর উদ্বোধন করেন। ১৩২০ (২ x ৬৬০) মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ সফলভাবে ১৫ আগস্ট ২০২২ জাতীয় গ্রিডের সাথে সমন্বয় করা হয়। ভারতের রেয়াতি অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় Bharat Heavy Electricals Limited (BHEL) এ প্রকল্পটি নির্মাণে কাজ করছে। রামপাল। বিদ্যুৎকেন্দ্র Bangladesh India Friendship Power Company Ltd (BIFPCL) এর মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে।
অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ৪০৫টি নদীপ্রবহমান। এ নদীগুলাের মধ্যে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী, যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অভিন্ন। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। তবে চুক্তির আশায় দুই দেশের ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত বিনিময় হয়েছে। নদীগুলাে হলাে— তিস্তা, ফেনী, মনু, মুহুরি, খােয়াই, গােমতী, ধরলা ও দুধকুমার।
কুশিয়ারা নদী
কুশিয়ারা নদী ভারতের আসাম রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের পর্বত থেকে উদ্ভূত হয়ে ২৪°৫৩‘ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°৩২‘ দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশ বরাবর বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অমলসিদ নামক স্থানে বরাক নদী দুটি ধারায় বিভক্ত হয়েছে। উত্তরপশ্চিমের ধারাটি সুরমা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের ধারাটি লংশিয়ারা। হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার মারকুলী নামক স্থানে কুশিয়ারা পুনরায় সুরমার সঙ্গে মিলিত হয়ে কালনী নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে ভৈরব উপজেলার .ভৈরববাজার পর্যন্ত প্রবাহিত হওয়ার পর সুরমার অপর শাখা ধনুর সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়েছে।