জাতীয় গ্রিড
গ্রিড (Grid) অর্থ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য থামবাহিত বৈদ্যুতিক তারজালি। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ একই জায়গায় যুক্ত করা হয়, যা জাতীয় গ্রিড নামে পরিচিত। এই জাতীয় গ্রিড দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গ্রিড সাবস্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়।
এই গ্রিড সাবস্টেশন এবং জাতীয় গ্রিড দুটোরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (PGCB)-এর হাতে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের বড় বড় খুঁটির ওপর যে তিন ধরনের তার দেখা যায় তাতে তিন মাত্রার বিদ্যুৎ পরিবহন করা হয়। ৪০০ কেভি, ২৩০ কেভি এবং ১৩২ কেভির বিদ্যুৎ।
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় কেন হয়?
গ্রিড বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ভারসাম্য না থাকা। অর্থাৎ কখনও চাহিদা রয়েছে ১০,০০০ মেগাওয়াটের, কিন্তু উৎপাদন হঠাৎ ৮,০০০ মেগাওয়াটে নেমে গেলাে, অথবা বেড়ে ১২,০০০ মেগাওয়াটে উঠে গেলাে। এরকম হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের তরঙ্গে বিঘ্ন ঘটে, সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
- মৌলভীবাজার জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- ১৯৭১ : দ্য শিলিগুড়ি কনফারেন্স’ : মুক্তিযুদ্ধের অনুদঘাটিত এক দলিল
- বিসিএস প্রস্তুতি (Bcs Preparation) : প্রশ্নোত্তরে একাত্তর (১৯৭১)
- জাতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- বারাে ভূঁইয়া : ইতিহাসের গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়
- সুনামগঞ্জ জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- খুলনা জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
এছাড়াও সঞ্চালন লাইন বা সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারসাম্যজনিত তারতম্য, ট্রান্সমিশন ও সরবরাহ লাইনে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, গ্রিডের সঙ্গে গ্রিড কোডের নির্দেশনার সমন্বয়, চাহিদার সঙ্গে লােডের সমন্বয় না হওয়া, ফোনে ফোনে লােড ব্যবস্থাপনা, মানহীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। একবার গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলাে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে কারিগরি কারণে সেটি চালু হতে সময় লাগে।
PGCB
পূর্ণরূপ | Power Grid Company of Bangladesh Ltd. |
যার অধীন | বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন। |
প্রতিষ্ঠা | ২১ নভেম্বর ১৯৯৬। |
দায়িত্ব | জাতীয় গ্রিড দক্ষতার সাথে পরিচালনা ও সম্প্রসারণ। |
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ইতিহাস
বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিড বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নতুন নয়। ১৯৯০-২০২২ সাল পর্যন্ত অসংখ্যবার নানা মাত্রায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এর আগেও ছােট-খাটো গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর এসকল বিপর্যয়ের জন্য দুর্বল গ্রিডকে দায়ী করা হয়।
দেশে উল্লেখযােগ্য ব্ল্যাক আউট | ||
তারিখ | পরিব্যাপ্ত এলাকা | সময়কাল |
৪ অক্টোবর ২০২২ | ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা | ৬-৮ ঘন্টা |
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা। | প্রায় দেড় ঘন্টা |
৩ মে ২০১৭ | উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩২টি জেলা | কয়েক ঘণ্টা |
১ নভেম্বর ২০১৪ | সারা দেশে | ১২ ঘন্টা |
গ্রিড সাবস্টেশন
উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আগত বিদ্যুৎকে নিয়ন্ত্রণ, রূপান্তর, সঞ্চালন ইত্যাদির জন্য প্রয়ােজনীয় অবকাঠামাে সংবলিত যন্ত্রপাতির সমাবেশকে গ্রিড সাবস্টেশন বলে।
ব্ল্যাক আউট
ব্ল্যাক আউট হলাে স্থানীয় কোনাে বিপর্যয়ের কারণে পুরাে গ্রিড অকার্যকর হয়ে পড়া। এতে বিস্তৃত এলাকার মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন।
গ্রিড ট্রিপ
যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপজ্জনকভাবে বেশি হয়, তখন বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়ার গ্রিডের অংশগুলােতে সার্কিট ব্রেকারের মতাে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, একে গ্রিড ট্রিপ বলে।
স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি
প্রচলিত বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে ডিজিটাল ও তথ্য-প্রযুক্তি সংযােগ ঘটানাের নামই হচ্ছে। স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম দুটি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমে রূপান্তরিত করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনকেসফট কর্পোরেশন। একটি হচ্ছে, টাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (DPDC)। অন্যটি দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (WZPDC)। স্মার্ট গ্রিডের আওতায় বিদ্যুৎ জেনারেশন হাউজ থেকে গ্রাহকের বাড়ি পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনে কোথায় কত ভােল্টেজ প্রয়ােজন, কত সরবরাহ হচ্ছে, দুর্বল লাইন, দুর্বল ট্রান্সফর্মার, দুর্বল খুঁটি এমন অনেক সমস্যা আগে থেকেই চিহ্নিত করা যাবে।
বিবিধ তথ্য
- ১৭ জানুয়ারি ২০২০ সিলেটে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন উদ্বােধন করা হয়। হযরত শাহজালাল (র) দরগাহ শরীফে প্রথমে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন সরবরাহ করা হয়।
- ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF) কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত এনার্জি আর্কিটেকচার পারফরম্যান্স ইনডেক্স-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে বিদ্যুতের কাঠামােগত দক্ষতা সূচকে বিশ্বের ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৪তম।
- ডিসেম্বর ২০২০-এ ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলেও সঞ্চালন লাইন নির্মিত না হওয়ায় এখনাে তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
- বাংলাদেশে লােডশেডিং কাজটি National Load Dispatch Centre (NLDPC)- এর মাধ্যমে করা হয়।