বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়ােগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ লিখিত পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর যেহেতু যােগ হয় না তাই এ পর্বে দুই ঘণ্টাব্যাপী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় যতটা ভালাে করবেন চাকরির ক্ষেত্রে ততােটাই এগিয়ে থাকবেন। পরীক্ষার হলে কোন অংশ কীভাবে লিখবেন এখনই তার রূপরেখা ঠিক করে নিন।
ফোকাস রাইটিং
সূক্ষ্ম ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে ‘ফোকাস রাইটিং’ এ বাড়তি নজর দিতে হবে। অনেকে গড়পড়তা লিখে পৃষ্ঠা পূর্ণ করবে। বেশি নম্বর পেতে ৩-৪ পৃষ্ঠার মধ্যেই ভালাে কিছু দিতে হবে। এ অংশে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে মােট ২টি নিবন্ধ লিখতে হয়। মােটামুটি ৫০-৬০ নম্বর ব্রাদ্দ থাকে। বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণসহ তুলনামূলক তথ্যগুলাে টেবিল, ছক বা গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে পারলে ভালাে নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ‘কালার পেন’ বা কাঠ পেন্সিল ব্যবহার করা যেতে পারে। একদিনে সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাে আরও কয়েকবার ঝালিয়ে নিতে পারেন।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ, বিভিন্ন প্রণােদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অগ্রগতি, স্বাধীনতার ৫০ বছরে। দেশের অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত রাষ্ট্রের রূপরেখা, টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, সম্ভাবনাময় ই-কমার্স সেক্টরের বিকাশে চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা সংকট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলাের হালনাগাদ তথ্য জেনে নিন।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- ভাইভায় ভালাে করার কৌশল
- বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা প্রস্তুতি
- ভালাে সিভি তৈরির কৌশল
- বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্যারিয়ার যা জানা জরুরি
- শব্দ নিয়ে শব্দ হােক ভুলেরা সব জব্দ হােক
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়ােগের মৌখিক পরীক্ষায় সফল হতে করণীয়
- মনোযোগ দাও প্রতিটি অধ্যায়ে
- অনুশীলন করো প্রতিদিন
- ব্যাকরণ অংশই বেশি গুরুত্বপূর্ণ
‘টপিক ধরে গুগলে সার্চ দিলেও একসাথে একাধিক কলাম, নিবন্ধ বা গবেষণাপত্র পাওয়া যায়, এগুলাে একসাথে আলাদা। একটা ফোল্ডারে জমা রেখে পড়তে পারেন। ‘ফোকাস রাইটিং ছাড়াও এগুলাে অনুবাদ ও ট্রান্সলেশনেও কাজে আসবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন রেমিটেন্স, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক রিজার্ভ, মাথাপিছু আয়, কয়েক বছরের দরিদ্রতা হ্রাস ও বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (GDP) ইত্যাদি এক পৃষ্ঠায় বুলেট আকারে টুকে রাখলে লেখার ক্ষেত্রে টনিক’ এর মতাে কাজ করবে।
অনুবাদ অনুশীলন
বাংলা-ইংরেজি উভয়মুখী অনুবাদের ক্ষেত্রে নম্বর-নৈপুণ্য অনেকাংশেই নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের ওপর। যারা ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম, অর্থ ও বাণিজ্য পাতা নিয়মিত পড়ে থাকেন উপকার দিবে। এজন্য এখন আর বাড়তি বই না পড়লেও চলবে। প্রতিদিন অন্তত দুটি করে পত্রিকার সম্পাদকীয় বা অর্থনীতি পাতা থেকে অনুবাদের অনুশীলন করতে পারেন।
পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পেয়ে সতর্কতার সঙ্গে সময় নিয়ে অনুবাদে হাত দিবেন। প্রয়ােজনে অনুবাদ দিয়েই শুরু করতে পারেন লিখিত পর্ব। অল্প লিখে বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য হাতের লেখা যতটা সম্ভব স্পষ্ট করতে হবে। কাটাকাটি যেন না থাকে। সহজ শব্দের অনুবাদ নান্দনিক ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে থাকে। তবে কোনােভাবেই দুটি অনুবাদের জন্য ৩০/৩৫ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা সমীচীন হবে না।
গণিতের গুরুত্ব
প্রিলিমিনারি বা লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকের নিয়ােগ পরীক্ষায় গণিত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গণিতে যাদের পূর্ব পারদর্শিতা রয়েছে তারা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে নম্বর বিচারে অন্যান্য অংশও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এজন্য সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট বরাদ্দ রাখুন গণিতে। শুধু অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে যেন অন্যান্য অংশের সময়ক্ষেপণ না হয়। সাধারণত ৫টা অঙ্কে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। অনেক সময় ছােট ছােট ৭টা অঙ্কও আসে। সাত পাঁচ যা-ই হােক মাথা ঠান্ডা রেখে ১২০ মিনিট লিখিত ‘ইনিংস’-এ টিকে থাকুন, নম্বর আসবে।
প্যাসেজ পড়ে উত্তর
অনেকে এ অংশটি শেষের দিকে শুরু করেন। এতে অনেক সময় পুরাে প্যাসেজ ঠিকমতাে পড়া হয়ে ওঠেনা। উত্তর খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। এজন্য আগে প্রশ্ন পড়ে নিতে পারেন। এতে সময় সাশ্রয় হবে। পাচটি প্রশ্নের জন্য ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ অংশে ২০ মিনিটের বেশি সময় নিতে যাবেন না। প্রশ্নের সূত্র ধরে হুবহু উত্তর না পেলেও ছেড়ে আসবেন না। তবে প্যাসেজে দেওয়া কোনাে শব্দ হুবহু না তুলে দিয়ে প্রতিশব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। গ্রহণযােগ্যতা বাড়বে। কিছু নম্বরও যােগ হবে।
আরও যা জানা জরুরি
অনেক সময় ১৫-২০ নম্বরের জন্য ‘বিজনেস লেটার’, এমপ্লিফিকেশন কিংবা এনালাইটিক্যাল কিছু লিখতে হয়। বিভিন্ন সালের প্রশ্নপত্র দেখে ‘বিজনেস লেটার’ এর ধরনগুলাে জেনে নিয়ে কয়েকদিন খাতায় লিখে অনুশীলন করতে পারেন। লেখার ফরম্যাটগুলাে একটা আলাদা খাতায়ও তুলে রাখলে চোখ বুলানাে যায়। এমপ্লিফিকেশন কিংবা এনালাইটিক্যাল অংশে ভালাে করার জন্য তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা বা আগে পড়ার অভ্যাস কাজে দেয়। একদিনে নতুন করে মাথা ঘামানাের দরকার নেই। যা-ই আসুক প্রশ্নানুসারে ‘টু দ্য পয়েন্ট এ লেখার চেষ্টা করবেন। সময় সমন্বয় করে লিখিত পরীক্ষা ভালােভাবে শেষ করতে পারলে শেষ ধাপ ভাইভার জন্য ইয়েস কার্ড পেয়ে যেতে পারেন।