বাংলায় নবাবী আমল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

Preparation BD
By -
0

বাংলায় নবাবী আমল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পর দিল্লির দুর্বল উত্তরাধিকারীদের সময়ে মুঘল শাসন শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এ সুযোগে বাংলার সুবাদারগণ প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতে থাকেন। মুঘল আমলের এ যুগ নবাবী আমল নামে পরিচিত।

বাংলার নবাব

মুর্শিদকুলী খান১৭০০-৩০ জুন ১৭২৭
সুজাউদ্দীন মুহাম্মদ খান৩০ জুন ১৭২৭-১৩ মার্চ ১৭৩৯
সরফরাজ খান ১৩ মার্চ ১৭৩৯-১০ এপ্রিল ১৭৪০
আলীবর্দী খান১০ এপ্রিল ১৭৪০-১০ এপ্রিল ১৭৫৬
সিরাজউদ্দৌলা১০ এপ্রিল ১৭৫৬-২৩ জুন ১৭৫৭

ব্রিটিশ বাংলার নবাব

মীরজাফর আলী খান২৯ জুন ১৭৫৭-২০ অক্টোবর ১৭৬০
মীর কাসিম২০ অক্টোবর ১৭৬০-১০ এপ্রিল ১৭৬৩
মীরজাফর আলী খান (দ্বিতীয় বার)১০ এপ্রিল ১৭৬৩-৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫
নাজিমুদ্দীন আলী খান১৭৬৫

মুর্শিদকুলী খান : নবাবী শাসন প্রতিষ্ঠা

মুর্শিদকুলী খান দক্ষিণ ভারতের একটি দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । দাক্ষিণাত্যের শায়েস্তা খানের দেওয়ান হাজী শফী ইস্পাহানী অল্প বয়সি মুর্শিদকুলীকে ক্রয় করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। প্রথমে তার নাম রাখা হয় মুহাম্মদ হাদী। একপর্যায়ে তিনি বেরার প্রদেশে দেওয়ান হাজী আব্দুল্লাহ খোরাসানীর অধীনে চাকরি নেন।

রাজস্ব আদায়ের কাজে তার অভিজ্ঞতা সম্রাট আওরঙ্গজেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৭০০ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব মুহাম্মদ হাদীকে সম্মানসূচক ‘করতলব খান’ উপাধি দিয়ে দেওয়ান (অর্থমন্ত্রী) হিসেবে বাংলায় পাঠান। কর্মদক্ষতার গুণে তিনি বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানিও লাভ করেন। এরপর সম্রাট তাকে ‘মুর্শিদকুলী খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

পরে তার নামানুসারে মুকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুর্শিদাবাদ’ রাখা হয় । সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হলে পুরো মুঘল সাম্রাজ্যে গোলযোগ দেখা দেয়। এ সময় থেকে তিনিই বাংলার নায়েব এ নাজিম হিসেবে শাসন করতে থাকেন। এরপর বাহাদুর শাহের সময় মুর্শিদকুলী খানকে দাক্ষিণাত্যে বদলি করা হয়। তবে বাংলায় নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তাকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে এখানে ফিরিয়ে আনা হয়। তার কর্মনিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের মধ্য দিয়েই সূচিত হয় বাংলার নবাবী শাসন।

পলাশীর যুদ্ধ

তারিখ২৩ জুন ১৭৫৭; ৫ শাওয়াল ১১৭০ হিজরি
বারবৃহস্পতিবার
যুদ্ধ শুরুসকাল ৮ টায়
যুদ্ধের স্থায়িত্বকাল৮ ঘণ্টার মতো

নবাবের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মীরমদান, মোহন লাল, খাজা আব্দুল হামিদ খান, নবসিং হাজারি প্রমুখের অধীনে নবাব সেনারা। ফরাসি বীর সিনফ্রেও ছিলেন নবাবের পক্ষের অন্যদিকে, মীরজাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দূর্লভ রামের অধীনে নবাবের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেনা নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং পরিস্থিতি অবলোকন করে।

সিরাজউদ্দৌলা

জন্ম১৭৩৩
মৃত্যু৩ জুলাই ১৭৫৭ [সূত্র : বাংলাপিডিয়া]
পূর্ণনামমির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলা
পিতাজয়েন উদ্দীন
মাতাআমিনা বেগম
খালা২ জন— ঘসেটি বেগম ও মায়মুনা বেগম
নানাআলীবর্দী খান
স্ত্রীলুৎফুদো বেগম
শ্বশুরইরিচ খাঁ
কন্যাউম্মে জোহরা
সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণামে ১৭৫২
সিংহাসনে আরোহণ৩ এপ্রিল ১৭৫৬; ২৩ বছর বয়সে
সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতার মেয়াদকাল১৪ মাস ১৪ দিন

নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। পাটনা যাওয়ার পথে মীরজাফরের জামাতা ও মীরনের ভগ্নিপতি মীর কাসিমের মাধ্যমে ধরা পড়েন। এরপর মীরজাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে ৩ জুলাই ১৭৫৭ মোহাম্মদী বেগের ছুরিকাঘাতে নিহত হন । মীর্জা জয়নুল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি নবাব সিরাজউদ্দৌলার লাশ দাফন করেন । নবাব আলীবর্দী খানের ‘আনন্দ উদ্যান’ খোশবাগের গোলাপ বাগানে নানার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয় ।

পলাশীর খলনায়কেরা

কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রের কারণেই পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। পলাশীর ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের অন্যতম—

মীরজাফরজগৎশেঠমহারাজা স্বরূপচাঁদ
রায় দূর্লভউমিচাঁদমহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র
রাজা রাজবল্লভমীর কাসিমইয়ার লতিফ খান
মহারাজা নন্দকুমারমীরনঘসেটি বেগম
মোহাম্মদী বেগদানিশ শাহ বা দানা শাহরবার্ট ক্লাইভ
ওয়াটসস্ক্রাফটনওয়াটসন

নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি ছিলেন মীরজাফর আলী খান। তার বিশ্বাসঘাতকতাতেই পলাশীর প্রান্তরে ২০০ বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। তাই ‘মীরজাফর’ নামটি আজও বিশ্বাসঘাতকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অন্ধকূপ হত্যা

২০ জুন ১৭৫৬ নবাব সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক কলকাতা দখলের সময় ইংরেজ সেনাপতি জে জেড হলওয়েলের রচিত কল্পকাহিনীই অন্ধকূপ হত্যা । বলা হয়, ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য, ১৪.১০ ফুট প্রস্থের ছোট একটি ঘরে ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দি করে রাখা হয় । এতে প্রচণ্ড গরমে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু হয়। কল্পকাহিনীতে প্রভাবান্বিত হয়ে ক্লাইভ ও ওয়াটসন কলকাতা দখল করে । ফলে সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সাথে আলীনগর সন্ধি করতে বাধ্য হন।

বর্গীদের আক্রমণ

বাংলায় বর্গী আক্রমণ বলতে মারাঠা সাম্রাজ্য কর্তৃক ১৭৪২- ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছরব্যাপী বারবার বাংলা আক্রমণ এবং এর ফলে বাংলার নবাবের সঙ্গে মারাঠাদের সংঘর্ষকে বোঝানো হয়। ‘বর্গী’ শব্দটি মারাঠি বারগির শব্দের অপভ্রংশ। বারগির বলতে মারাঠা সাম্রাজ্যের সেই সব অশ্বারোহীদের বোঝাতো যারা অভিযানে যাওয়ার সময় কেবল একটি সাত হাত লম্বা কম্বল ও বর্শা নিয়ে বের হতো। মারাঠা নেতা ছত্রপতি শিভাজী কর্তৃক এদের ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। শেষ পর্যন্ত ১৭৫১ সালে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের অবসান ঘটে। এ চুক্তির অংশ হিসেবে আলীবর্দী খান বর্গীদের হাতে উড়িষ্যা ছেড়ে দেন ।

শিয়াদের উত্থান

বাংলায় শিয়া মতবাদ প্রচারিত হয় সতেরো শতকের প্রথমভাগে। পারস্যের বণিক ও ভ্রমণকারীরা এ মতবাদ প্রচার করেন। মীর জুমলা ও শায়েস্তা খান এর মতো বিখ্যাত মুঘল সুবাদাররা ছিলেন শিয়া। বাংলার মুঘল শাসক শাহ্ সুজা সুন্নি হলেও তার মা মমতাজ বেগম (সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী) ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী। শাহ্ সুজার আমলেই ঢাকার বিখ্যাত হোসেনী দালান নির্মাণ করা হয়। শুধু তাই নয়, আঠারো শতকের প্রথমভাগের অধিকাংশ নবাবই ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। বাংলায় শিয়া আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ পায় মুর্শিদকুলী খানের আমলে। মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্ৰ করে তিনি বাংলায় কার্যত একটি শিয়া রাজবংশ গড়ে তুলেন। যদিও এখানকার মুসলমানদের অধিকাংশই সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত।

সুজাউদ্দীন খান

  • নবাব সুজাউদ্দীন ছিলেন— মুর্শিদকুলীর জামাতা ।
  • শায়েস্তা খানের পর একমাত্র তার আমলেই বাংলায় ১ টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেত ।

আলীবর্দী খান

  • আলীবর্দী খানের প্রকৃত নাম— মির্জা মুহাম্মদ আলী
  • ১৭৪০ সালে গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ খানকে পরাজিত করে বাংলার মসনদ অধিকার করেন— আলীবর্দী খান
  • বর্গীরা বাংলায় ব্যাপক অত্যাচার করেছিল— আলীবর্দী খানের সময়ে ।
  • বাংলায় মারাঠী বা বর্গী দমনে সবচেয়ে বেশি অবদান – আলীবর্দী খানের ।
  • আলীবর্দীর সময়ে বাংলার রাজধানী ছিল— মুর্শিদাবাদ ।

মীর কাসিম ও বক্সারের যুদ্ধ

  • পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাংলার নবাব হন – মীরজাফর।
  • বক্সারের যুদ্ধ হয়— ২২ অক্টোবর ১৭৬৪।
  • বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন— হেক্টর মনরো ।
  • বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন— মীর কাসিম।

স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজদের গতিরোধ করার মতো শক্তি ও সাহস এদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর তখন থেকেই এদেশের ভাগ্যবিধাতা হয়ে যায় ইংরেজরা; নবাব থাকে নামমাত্র। বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসিমের পরাজয়ের পর বাংলা তথা উপমহাদেশে ইংরেজরা দেওয়ানি লাভ করে । মীর কাসিমের নবাবী লাভের আগেই রবার্ট ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কিন্তু ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এদেশে কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় তাকে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করে দ্বিতীয়বার এদেশে প্রেরণ করে। তিনি মুঘল সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব লাভ করেন। এতে বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ উপনিবেশের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। শুরু হয় প্রায় ২০০ বছরের লুটপাট আর গোলামির ইতিহাস।

বিগত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন নবাব কে?
উত্তর : মুর্শিদকুলী খান ।

প্রশ্ন : কোন মুঘল সুবাদার বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন?
উত্তর : মুর্শিদকুলী খান।

প্রশ্ন : পলাশীর যুদ্ধ কবে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তর : জুন ২৩, ১৭৫৭।

প্রশ্ন : বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলা কোন যুদ্ধে পরাজিত হন?
উত্তর : পলাশী যুদ্ধে।

প্রশ্ন : নবাব সিরাজউদ্দৌলার পিতার নাম কী?
উত্তর : জয়েন উদ্দীন

প্রশ্ন : ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় কোন নদীর তীরে?
উত্তর : ভাগীরথী ।

প্রশ্ন : নবাব মুর্শিদকুলী খানের বাংলায় শাসনকাল
উত্তর : ১৭১৭- ১৭২৭ ।

প্রশ্ন : বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন
উত্তর : মুর্শিদকুলী খান।

প্রশ্ন : ‘লুণ্ঠন প্রিয় বর্গী’ বলা হতো কাদের?
উত্তর : মারাঠি সৈন্যদলকে।

প্রশ্ন : ‘বর্গী’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
উত্তর : মহারাষ্ট্রীয়।

প্রশ্ন : ‘অন্ধকূপ হত্যা’ কাহিনী কার তৈরি?
উত্তর : হলওয়েল।

প্রশ্ন : মুসলমান শাসনামলে এদেশে এসে অত্যাচার ও লুট করেছে কারা?
উত্তর : বর্গীরা।

প্রশ্ন : বক্সারের যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
উত্তর : ১৭৬৪ সালে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !