গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার নাম ও সম্পাদক

Preparation BD
By -
0

এ দেশে সংবাদপত্রের প্রচার পাশ্চাত্য প্রভাবের ফল। বাংলাদেশের তথা ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ (Hickey’s Bengal Gazette; or the Original Calcutta General Advertifer)। এই ইংরেজি সাময়িক পত্রটি জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদপত্র প্রকাশের ব্যাপারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট ছিল না।

কারণ বেসরকারি ইউরোপীয়দের মালিকানার এসব সংবাদপত্র কোম্পানির কঠোর সমালোচক হিসেবে ‘কোম্পানির বিঘোষিত নীতি ও শাসনপদ্ধতি এবং কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের কার্যকলাপকে এরা ক্রমাগত আক্রমণ’ করে চলেছিল। ফলে লর্ড ওয়েলেসলি সংবাদপত্র শাসনের উদ্দেশ্যে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কোচন করে কঠোর সেন্সর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

এ ব্যবস্থায় সকল সংবাদ সেক্রেটারি কর্তৃক পরীক্ষিত হয়ে প্রকাশিত হতো এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে ইউরোপে নির্বাসন দেয়া হতো। গভর্নর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এ ব্যবস্থা রহিত করেন। এর চার মাস পূর্বে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রথম বাংলা সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’ প্রকাশিত হয় ।

বাংলা সাময়িক পত্রের সমগ্র ইতিহাসকে কয়েকটি যুগে বিভক্ত করা যায়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’ থেকে ১৮২৯-এ প্রকাশিত ‘বঙ্গদূত’ পর্যন্ত প্রথম যুগ। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ থেকে ১৮৪৩-এ প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার পূর্ব পর্যন্ত দ্বিতীয় যুগ। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা থেকে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’-এর পূর্ব পর্যন্ত তৃতীয় যুগ।

বঙ্গদর্শন থেকে ১৮৭৭-এ প্রকাশিত ‘ভারতী’র পূর্ব পর্যন্ত চতুর্থ যুগ। ভারতী থেকে ১৯১৪ সালে প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’ পর্যন্ত পঞ্চম যুগ বলে গ্রহণ করা যেতে পারে। এ পর্যন্ত বাংলা সাময়িক পত্র যে উৎকর্ষ লাভ করেছিল পরবর্তীকালে তারই অনুসরণ লক্ষ্য করা যায় ।

গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার নাম ও সম্পাদক

নামপ্রথম প্রকাশসম্পাদক
বেঙ্গল গেজেট১৭৮০জেমস অগাস্টাস হিকি
দিগদর্শন১৮১৮জন ক্লার্ক মার্শম্যান
সমাচার দর্পণ১৮১৮উইলিয়াম কেরি
বাঙ্গাল গেজেট১৮১৮গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মণ সেবধি১৮২১রাজা রামমোহন রায়
সম্বাদ কৌমুদী১৮২১রাজা রামমোহন রায় ও ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
মীরাৎ-উল-আখবার১৮২২রাজা রামমোহন রায়
সমাচার চন্দ্রিকা১৮২২ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বঙ্গদূত১৮২৯নীলমণি হালদার
সংবাদ প্রভাকর১৮৩১ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
জ্ঞানান্বেষণ১৮৩১দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
সমাচার সভারাজেন্দ্র১৮৩১শেখ আলীমুল্লাহ
সংবাদ রত্নাবলী১৮৩২ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
তত্ত্ববোধিনী১৮৪৩অক্ষয়কুমার দত্ত
রংপুর বার্তাবহ১৮৪৭গুরুচরণ রায়
সর্বশুভকরী পত্রিকা১৮৫০ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বিবিধার্থ সংগ্রহ১৮৫১রাজেন্দ্রলাল মিত্র
মাসিক পত্রিকা১৮৫৪প্যারীচাদ মিত্র ও রাধানাথ শিকদার
ঢাকা প্রকাশ১৮৬১কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা১৮৬৩কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার
অমৃতবাজার পত্রিকা১৮৬৮বসন্ত কুমার ঘোষ ও শিশির কুমার ঘোষ
শুভ সাধিনী১৮৭০কালীপ্রসন্ন ঘোষ
বঙ্গদর্শন১৮৭২বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আজিজন্নেহার১৮৭৪মীর মশাররফ হোসেন
বান্ধব১৮৭৪কালীপ্রসন্ন ঘোষ
পাষণ্ড পীড়ন১৮৪৬ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
এডুকেশন গেজেট১৮৪৬রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
সংবাদ সাধুরঞ্জন১৮৫০ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
সংবাদ রসসাগর১৮৫০রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
সাপ্তাহিক বার্তাবহ১৮৫৩রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্ণিমা১৮৫৯বিহারীলাল চক্রবর্তী
সংবাদ রত্নাবলীঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
সাহিত্য সংক্রান্ত১৮৬৩বিহারীলাল চক্রবর্তী
আর্য দর্শন১৮৬৩যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ
ভারতী১৮৭৭দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইসলাম১৮৮৫মুন্সী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ
ঝলক১৮৮৫জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
সুধাকর১৮৯৪শেখ আবদুর রহিম
সাহিত্য১৮৯০সুরেশচন্দ্র সমাজপতি

আরো পড়ুন : সমকাল পত্রিকা প্রকাশিত হয় কবে?

সাধনা১৮৯১রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মিহির (মাসিক)১৮৯২শেখ আবদুর রহিম
হাফেজ১৮৯৬শেখ আবদুর রহিম
কোহিনূর১৮৯৮মোঃ রওশন আলী
লহরী১৯০০মোজাম্মেল হক
প্রবাসীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায়
নবনূর১৯০৩সৈয়দ এমদাদ আলী
মাসিক মোহাম্মদী১৯০৩মোহাম্মদ আকরম খাঁ
বাসনা১৯০৮শেখ ফজলুল করিম
সবুজপত্র১৯১৪প্রমথ চৌধুরী
আল এসলাম (মাসিক)১৯১৫মোহাম্মদ আকরম খাঁ
সওগাত১৯১৮মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
মোসলেম ভারত১৯২০মোজাম্মেল হক
আঙুর (কিশোর পত্রিকা)১৯২০ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
দৈনিক সেবক১৯২১মোহাম্মদ আকরম খাঁ
ধূমকেতু১৯২২কাজী নজরুল ইসলাম
কল্লোল১৯২৩দীনেশ রঞ্জন দাস
মুসলিম জগৎ১৯২৩খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
সাপ্তাহিক মুসলিম জগৎ১৯২৫আবুল কালাম শামসুদ্দীন
লাঙ্গল১৯২৫কাজী নজরুল ইসলাম
কালি-কলম (মাসিক)১৯২৬শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
প্রগতি১৯২৭বুদ্ধদেব বসু ও অজিত দত্ত
শিখা (প্রথম বছর)১৯২৭আবুল হুসেন
শিখা (২য় ও ৩য় বছর)১৯২৭কাজী মোতাহার হোসেন
বেদুঈন১৯২৭আশরাফ আলী খান
পরিচয়১৯৩১বিষ্ণু দে
দৈনিক আজাদ১৯৩৫মোহাম্মদ আকরম খাঁ
চতুরঙ্গ১৯৩৯হুমায়ূন কবীর
দৈনিক নবযুগ১৯৪১কাজী নজরুল ইসলাম
প্রতিরোধ (পাক্ষিক)১৯৪২রণেশ দাশগুপ্ত
সাহিত্যপত্র১৯৪২বিষ্ণু দে
কবিতা১৯৪৫বুদ্ধদেব বসু
বেগম১৯৪৯নূরজাহান বেগম
ইনসাফ১৯৫০মহিউদ্দীন
সমকাল১৯৫৪সিকান্দার আবু জাফর
মাহেনও১৯৪৯আবদুল কাদির
অরুণোদয় (মাসিক)১৯৫৬রেভারেন্ড লাল বিহারী দে
জেহাদ১৯৬২আবুল কালাম শামসুদ্দীন
জ্ঞানাঙ্কুর১২০৯ বঙ্গাব্দশ্ৰীকৃষ্ণ দাস
অবোধ বন্ধু১২৭৫ বঙ্গাব্দবিহারীলাল চক্রবর্তী
পরিষ‍ৎ১৩০৫-১০ বঙ্গাব্দরামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী
জয়তী১৩৩৭ বঙ্গাব্দআবদুল কাদির
সংলাপআবুল হোসেন
সৈনিকশাহেদ আলী
গুলিস্তাএস ওয়াজেদ আলী
সাম্যবাদীখান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
বিচিত্রাফজল শাহাবুদ্দীন
কবিতাপত্রফজল শাহাবুদ্দীন
কবিকণ্ঠফজল শাহাবুদ্দীন
বঙ্গদর্শন (নব পর্যায়)মোহিতলাল মজুমদার
সন্দেশসুকুমার রায়
সাহিত্য পত্রিকামুহাম্মদ আবদুল হাই
Reformerপ্রসন্ন কুমার ঠাকুর
Hindu Intelligenceকাশী প্রসাদ ঘোষ
সাহিত্য পত্রিকাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
ভাষা সাহিত্য পত্রজাঃ বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
সাহিত্যিকীরাঃ বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
উত্তরাধিকারবাংলা একাডেমি
লেখাবাংলা একাডেমি

মডেল প্রশ্ন

১. বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্রের নাম কি? কোথা থেকে, কত সালে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্রের নাম ‘দিগদর্শন’। এটি শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

২. বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্রের নাম কি? কত সালে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : সমাচার দর্পণ। এটি ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

৩. বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র কোনটি?

উত্তর : বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘সংবাদপ্রভাকর’। এর সম্পাদক ছিলেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। পত্রিকাটি সাপ্তাহিকরূপে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৮৩১ সালে। ১৮৩৯ সালে এটি পরিণত হয় দৈনিক পত্রিকায়।

৪. বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে? এটি কোন সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?

উত্তর : বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রথম সম্পাদক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এটি ১৮৭২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ।

৫. কোন পত্রিকাটি চলিত ভাষারীতির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল? এর সম্পাদক কে?

উত্তর : ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাটি চলিত ভাষারীতির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পত্রিকাটি প্রথম ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী।

৬. ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার প্রকাশকাল কত? এর সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর : সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ১৮৪৩ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে। ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী সভা কর্তৃক প্রকাশিত এ পত্রিকার মাধ্যমেই সমাজে আধুনিক দৃষ্টিসম্পন্ন নতুন চিন্তাধারার সূচনা হয় । তখন পত্রিকার সম্পাদনা করতেন অক্ষয়কুমার দত্ত।

৭. ‘সওগাত’ পত্রিকাটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয়? এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লেখক কে?

উত্তর : সওগাত একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা। ১৩২৫ বঙ্গাব্দে (১৯১৮ সালে) মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক হিসেবে নাসিরউদ্দীনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ একটি উন্নতমানের পত্রিকা প্রকাশ করা। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সওগাতের প্রধান লেখকদের অন্যতম। সওগাতের অন্যান্য প্রধান লেখক ছিলেন বেগম রোকেয়া, কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ এবং আবুল ফজল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এতে লিখেছেন।

৮. কল্লোল যুগ ও এ যুগের কবিদের সম্পর্কে ধারণা দিন।

উত্তর :’কল্লোল’ পত্রিকাকে ঘিরে যে সময়টিতে সাহিত্যের আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের প্রকাশ ও বিকাশ তাই ‘কল্লোল যুগ’ (১৯৫০) নামে পরিচিত। ‘কল্লোল’ পত্রিকায় যারা লিখতেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। ৯. ঢাকার

৯. ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা দিন।

উত্তর : ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান। এর ছত্রছায়ায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সংগঠিত হয়। বাঙালি মুসলমান সমাজে আড়ষ্ট বুদ্ধিকে মুক্ত করে জ্ঞানপিপাসা জাগিয়ে তোলার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রবীণ ছাত্র ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাহিত্য সমাজের মূল ভাবযোগী ছিলেন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের শিক্ষক কাজী আবদুল ওদুদ ও কর্মযোগী আবুল হুসেন। ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বার্ষিক মুখপত্র ‘শিখা’র আপ্তবাক্য ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’।

১০. ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর প্রতিষ্ঠা কোন খ্রিস্টাব্দে? এ সংগঠন থেকে প্রকাশিত মুখপত্রের নাম কি?

উত্তর : মুক্তবুদ্ধি চর্চার উদ্দেশ্যে কাজী আব্দুল ওদুদ, আবুল হুসেন, আব্দুল কাদির, আবুল ফজল, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ ঢাকায় ১৯২৬ সালে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ নামে এ সংগঠনটি গড়ে তোলেন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর মুখপত্রের নাম ‘শিখা’।

১১. ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ এমন কয়েকটি পত্রিকার নাম লিখুন।

উত্তর : শিখা, প্রগতি, ক্রান্তি, লোকায়ত ।

১২. কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত তিনটি পত্রিকার নাম লিখুন।

উত্তর : ধূমকেতু (১৯২২), লাঙ্গল (১৯২৫), নবযুগ (১৯৪১)।

১৩. ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকাটি কোন প্রকৃতির? কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : ষাণ্মাসিক। বাংলা একাডেমী থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

১৪. বিশ শতকের একটি সাময়িকপত্রের পরিচিতি লিখুন।

উত্তর : বিশ শতকের তথা সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিশিষ্ট পত্রিকা ‘কল্লোল’। দীনেশরঞ্জন দাসের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এই মাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি অতি আধুনিক লেখকগোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। তৎকালীন তরুণ লেখক রবীন্দ্র বিরোধিতার নাম করে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। কল্লোল প্রায় সাত বছর চলেছিল, কিন্তু এই অল্প সময়েই একটা প্রগতিশীল লেখকগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিল। এ পত্রিকায় যারা নিয়মিত লিখতেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। এই লেখকেরা তৎকালীন ইউরোপীয় আদর্শে বাস্তব জীবন, মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়কে তাঁদের রচনার উপজীব্য করছিলেন।

১৫. ঢাকার বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পরিচয় দিন।

উত্তর : বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার-বিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মাধ্যমেই এ আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাহিত্য সমাজের মূল বাণী ছিল : ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এ কথাটি সমাজের বার্ষিক মুখপত্র শিখার শিরোনামের নিচে লেখা থাকত। তখন শিখা পত্রিকায় যাঁরা লিখতেন তাঁরা ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিলেন।

বাংলার মুসলমান সমাজে যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা বিরাজমান ছিল, সেসব দূরীকরণই ছিল এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ধর্মবিশ্বাস, পর্দাপ্রথা, সুদপ্রথা, নৃত্যগীত ইত্যাদি সম্পর্কে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করতেন। সাহিত্য সমাজের বিভিন্ন সভায় পঠিত এবং শিখা পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধে তাঁদের চিন্তা ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটতো। শিখাগোষ্ঠীর এসব বক্তব্য তৎকালীন ঢাকার রক্ষণশীল সমাজ মেনে নেয়নি; যার ফলে আবুল হুসেনকে জবাবদিহি করতে হয় এবং শেষপর্যন্ত তাঁকে চাকরি ও ঢাকা ছাড়তে হয়। ১৯৩১ সালে তাঁর ঢাকা ত্যাগের ফলে আন্দোলনে ভাটা পড়ে এবং ১৯৩৮ সালের পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !