১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৯০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে আমাদের এ বিশেষ আয়োজন
জনসংখ্যা কী
জনসংখ্যা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Population। সাধারণ অর্থে জনসংখ্যা বলতে কোনো দেশ বা অঞ্চলে বসবাসকৃত সংখ্যাকে বোঝায়। তবে ভৌগোলিক অর্থে জনসংখ্যা বলতে কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা অঞ্চলে বসবাসকারী এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত লোকজনকে বোঝানো হয় ।
জনশুমারি
কোনো দেশের বা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ গণনাকেই জনশুমারি বলা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে জনশুমারি একটি জনগোষ্ঠীর বা দেশের জনসংখ্যা গণনার সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ, তথ্য একত্রীকরণ এবং জনমিতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্যাদি প্রকাশ: করা বোঝায় ।
ইতিহাসে সর্বপ্রথম নথিভুক্ত জনশুমারি হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম উইলিয়াম কর্তৃক ১০৮৬৷৷ সালে ডুমস ডে বুক বা জমিতে বসবাসকারী মানুষের উপর পরিচালিত জরিপ।
১৭৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আধুনিক জনশুমারি পরিচালিত হয়। অবিভক্ত বাংলায় প্রথম জনশুমারি শুরু হয় ১৮৭২ সালে । আর স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। সর্বশেষ ১৫-২১ জুন ২০২২ ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহ গণনা অনুষ্ঠিত হয় ।
জনসংখ্যায় শীর্ষ দেশ
চীনকে পেছনে ফেলে ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। ১৯ এপ্রিল ২০২৩ UNFPA’র বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী, ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ। অন্যদিকে, চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। চীনের জনসংখ্যা ১৪২ ৷৷ কোটি ৫৭ লাখ ।
জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধে ১৯৭৯ সালে চীন ‘এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে । শক্তহাতে এই নীতি বাস্তবায়নের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসে। কিন্তু পরে জন্মহার অতিমাত্রায় কমে যাওয়ায় এ নীতি থেকে সরে আসে।
বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব ঠেকাতে জনভারসাম্য রক্ষায় ১ জানুয়ারি ২০১৬ চীন সরকার ‘দুই সন্তান নীতি’ কার্যকর করে। এরপর ১ মে ২০২১ চীন সরকার তিন সন্তান নীতি ঘোষণা করে ।
জনসংখ্যা তত্ত্ব
১৭৯৮ সালে থমাস রবার্ট ম্যালথাস An Essay on the Principle of Population as it affects the Future Improvement of Society বইয়ে তার বিখ্যাত জনসংখ্যা তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এ তত্ত্ব অনুসারে খাদ্যশস্যের উৎপাদন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। স্বাভাবিক নিয়মে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যসংকট এমনকি দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সময়ের আবর্তে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেক দেশেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) বিশ্বের উন্নয়নশীল ও উত্তরণমুখী দেশগুলোতে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সম্পদ সহায়তা দানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরকল্পনা সেবায় ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সহায়তা দেয় এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা নীতি তৈরিতে সাহায্য করে ।
- UNFPA United Nations Population Fund
- প্রতিষ্ঠা : ১৯৬৯।
- সদর দপ্তর : নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
- মুখ্য প্রকাশনা : বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট
- প্রথম নির্বাহী পরিচালক রাফায়েল এম. সালাস (ফিলিপাইন); ১৯৬৯-১৯৮৭
- বৰ্তমান নির্বাহী পরিচালক : নাতালিয়া কানেম; ৩ অক্টোবর ২০১৭-বর্তমান।
জনসংখ্যায় শীর্ষ দেশ ও বাংলাদেশের অবস্থান
বিষয় | শীর্ষ দেশ | বাংলাদেশ |
বিশ্বে | ভারত | ৮ম |
মুসলিম বিশ্বে | ইন্দোনেশিয়া | ৩য় |
মুসলিম জনসংখ্যায় | ইন্দোনেশিয়া | ৪র্থ |
সার্কভুক্ত দেশে | ভারত | ৩য় |
এশিয়ায় | ভারত | ৫ম |
ঘনত্বে | মোনাকো | ৬ষ্ঠ |
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
- জনসংখ্যা বিষয়ক শিক্ষাকে বলে Demography ।
- বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ৮০৪.৫০ কোটি (UNFPA ২০২৩)।
- রাষ্ট্রের মৌলিক চার উপাদানের মধ্যে জীবন্ত উপাদান জনসংখ্যা। (অন্য তিনটি উপাদান নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব)।
- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনবহুল শহর টোকিও (জাপান)।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের স্লোগান
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আশির দশকে ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ঠ স্লোগান প্রবর্তন করা হয়। ২০০৪ সালে পরিবর্তন করে ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’ স্লোগানটি করা হয়। ১৪ অক্টোবর ২০১৮ প্রথম স্লোগানকে পুনর্বহাল করে ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ঠ ব্যবহারে পরিপত্র জারি করা হয়
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা
প্রতিবেদনের নাম | জনসংখ্যা (কোটি) |
বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০২৩ | ১৭.৩০ |
স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২ | ১৭.০৮ |
৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ | ১৬.৯৮ |
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ | ১৬.৯১ |
World Population Prospect ২০২২ | ১৭ |